এগিয়ে বাংলা। গোটা দেশের তুলনায় এই রাজ্যেই শিশু ও নবজাতকরা নিরাপদ। এই বক্তব্য খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। দেশব্যাপী স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশজুড়ে যেখানে শতকরা ২৪.৯ শতাংশ নবজাতক মৃত্যুর কবলে পড়ে, সেখানে বাংলায় সংখ্যাটি ১৫.৫। একইভাবে শিশুমৃত্যুতে দেশের শতকরা হার ৩৫.৫ হলেও বাংলায় তা ২২ শতাংশ। পাঁচবছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রেও গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ছবিটি অনেক উজ্জ্বল। দেশে ওই হার যেখানে ৪১.৯ শতাংশ সেখানে বাংলায় তা ২৫.৪ শতাংশ। ২০১৯-২১ সালের তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে।
এবিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, কয়েক বছর ধরেই রাজ্যে শিশুমৃত্যু কমাতে সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। হাসপাতাল পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। শিশুদের জন্মপূর্ব অবস্থা থেকে জন্মানোর পরেও নজরদারি বেড়েছে। নবজাতক ও শিশুদের জন্য নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। নিরন্তর প্রয়াসের মধ্যে দিয়েই রাজ্যের শিশু ও নবজাতকদের নিরাপদ করে তুলতে পেরেছে রাজ্য। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব শিশুমৃত্যু হার অনেকটাই কমিয়ে দিতে সক্ষম। সেই লক্ষ্যেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে বাংলায়। পরিসংখ্যান অনুসারে, রাজ্যে চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে ৯১.৭ শতাংশ শিশু জন্ম নেয়। দেশের ক্ষেত্রে তা ৮৮.৬ শতাংশ। ২০১৫-১৬ সালে দেশের ৭৮.৯ শতাংশ শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয়েছিল। বেড়েছে ৯.৭ শতাংশ। আর বাংলায় ২০১৫-১৬ সালে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৭৫.২ শতাংশ। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হারে দেশকে টেক্কা দিয়েছে বাংলা। সাম্প্রতিক বৃদ্ধির হার ১৬.৫ শতাংশ, যা একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত।
পাশাপাশি, এই পরিসংখ্যানেও একটি বিশেষ ঘটনা আছে, যা বাংলার সার্বিক উন্নতির পরিচয় দেয়। গোটা দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের পরিসংখ্যান বলছে, শহরাঞ্চলে ১০০টির মধ্যে ৯৪টি শিশু হাসপাতালে বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জন্মায়। কিন্তু দেশের গ্রামীণ এলাকায় এই সংখ্যা প্রায় ৮ শতাংশ কম। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে শহর ও গ্রামে শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে এই তফাত মাত্র ১ শতাংশ। অর্থাৎ এরাজ্যের গ্রাম ও শহর দুই জায়গার মানুষ প্রায় সমান সুযোগ পেয়ে অগ্রগতি নিশ্চিত করেছে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানে রয়েছে আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য। শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু রোখার ক্ষেত্রে, অতীতের তুলনায়, রাজ্যের উন্নতির ছবিটা জাতীয় চিত্রের থেকে ভালো। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ২০১৫-১৬ সালে দেশে নবজাতকের মৃত্যু হার ছিল ২৯.৫ শতাংশ। এখন তা ২৪.৯ শতাংশ। অর্থাৎ নবজাতকের মৃত্যুহার কমেছে ৪.৬ শতাংশ। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৫-১৬ সালে নবজাতকের মৃত্যুর হার ছিল ২২ শতাংশ। সেটা ৬.৫ শতাংশ কমেছে। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সমীক্ষা রিপোর্ট বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নতির সত্যকেই তুলে ধরছে।