অসমে গিয়েছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গুয়াহাটিতে পা রেখেই প্রথমে কামাক্ষ্যাদেবীর মন্দিরে পুজো দেন। তারপর অসমে পার্টির নেতাকর্মীর সামনে ভাষণ দেন। মিনিট কুড়ির জ্বালাময়ী ভাষণে অভিষেক অসমের বিজেপি সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করেন। বারে বারেই আনেন সিবিআই-ইডি’কে দিয়ে বিরোধীদের উপর তদন্ত-সন্ত্রাসের কথা।
তাঁর প্রথম সফরেই প্রত্যাশিতভাবে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন যুবরাজ। সেই সঙ্গে বিজেপিকে মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে নিশানা করলেন কংগ্রেসকেও। তাঁর দাবি, তৃণমূল কোনও দিন বিজেপির কাছে মাথানত করবে না।
কংগ্রেস মাথানত করেছে বলেই অসমে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পেরেছে এবং ছ’বছর ধরে রাজ করছে। বিজেপিকে ধাক্কা দিতে ২০২৪-এর লোকসসভা ভোটে ১৪ আসনের মধ্যে ১০ আসন তৃণমূলকে দেওয়ার আর্জি জানান অসমবাসীর উদ্দেশে।
অভিষেকের বক্তব্য, এতদিনে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, ধমকে চমকে তৃণমূলকে শায়েস্তা করা যাবে না। অভিষেক আরও বলেন, দিল্লি থেকে বিজেপির নেতারা এলে এঁরা পায়ে পড়ে যায়। তৃণমূলের তরুণ নেতাটি বোঝাতে চান, ওঁরা কোনও বড় ব্যাপার নয়। সবাই সমান। কিন্তু ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে।
‘তৃণমূল নেতাদের পেছনে পেট্রল দিন, দেখবেন কেমন দৌড়বে’, ফের বেলাগাম দিলীপ
বিজেপির ‘অপশাসন’ নিয়ে সরব হতে গিয়ে এদিন বারে বারেই কংগ্রেসকে নিশানা করেন অভিষেক।
কেন অসমের মহিলারা তা পাবেন না? অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, আসুন সরকারের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আমরা মুখোমুখি বসি। মানুষ দেখুক কোন সরকার তাদের জন্য কী করেছে। অভিষেক বলেন, বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের সরকারের চাইতে বাংলায় দিদির সিঙ্গল ইঞ্জিনের সরকার অনেক এগিয়ে। তাঁর কটাক্ষ, ডবল ইঞ্জিনের সরকার মানে ডবল দুর্নীতি।
গত বছর বাংলায় বিধানসভা ভোটে তৃতীয়বারের জন্য জয় হাসিলের পরই অভিষেক অন্য রাজ্যে দলের বিস্তারের কথা ঘোষণা করেছিলেন। আগামী বছর মেঘালয় ও ত্রিপুরায় বিধানসভার নির্বাচন। মেঘালয়ে দল ভাঙিয়ে তৃণমূলই এখন প্রধান বিরোধী দল। অভিষেক বলেন, ভোটের অংকে ত্রিপুরায় তৃণমূল এখন দ্বিতীয় স্থানে আছে। ওই দুই রাজ্যে আগামী বছর সরকার গড়ার সংকল্প ঘোষণার পাশাপাশি অভিষেক ডাক দেন, অসমের ১০ লোকসভা তৃণমূলের চাই।
উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কাজটা মোটেই কঠিন নয়। বিজেপিকে জব্দ করা সম্ভব। সেটা কেউ করেনি, ভাবেনি, তাই ওরা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারছে। আপনারা লড়াই করুন। আমি পাশে থাকব। কংগ্রেসকে বিদ্রুপ করে বলেন, দুর্ভাগ্য হল, এই রাজ্যে এতদিন যে বিরোধী দল ছিল, তারা মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ওঠাবসা করে। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী একজন বিশাল ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন।
তারা শক্তি বাড়াতে চাইলে বিজেপি এবং অসম প্রশাসন যে ছেড়ে কথা বলবে না সে ব্যাপারে তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক যে ওয়াকিবহাল তার কথায় এদিন তা স্পষ্ট ছিল। ত্রিপুরায় বিজেপি এবং বিপ্লব দেবের সরকারের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাত এখনও জারি আছে। অভিষেক এদিন গুয়াহাটির সভায় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, লড়াই শুরু করার মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। পিছু হটা চলবে না। কথা দিচ্ছি, আপনাদের আপদ-বিপদে আমি স্বয়ং ছুটে আসব। প্রতিনিধি পাঠিয়ে দায় সারব না।
সনিয়া গান্ধীর পার্টি এখনও অসমে প্রধান বিরোধী দল। ২০১৬-তে কংগ্রেসের তিনবারের সরকারের পতন ঘটিয়ে প্রথমবার অসম বিজয় করে বিজেপি। তারপর থেকে রাজ্যে কংগ্রেসের পতনের সূচনা হয়েছে। গত বছরও আশা জাগিয়ে শেষে বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পরে তারা। বিজেপির মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে দল ছাড়েন বহু নেতা-কর্মী।
অসম কংগ্রেসের অন্যতম দুই মুখ মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুস্মিতা দেব এবং অসম প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রিপুন বোরা-সহ অনেক নেতাই এখন তৃণমূলে। অভিষেক এদিন বলেন, সুস্মিতা কেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। আসলে কংগ্রেসে থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার সুযোগ নেই।
তৃণমূল সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য, বিজেপিকে গদিচ্যুত করা কোনও বিরাট কাণ্ড নয়। আসলে ওরা শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গতকালই গুয়াহাটির অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলার সরকারকে নিশানা করেন অনুপ্রবেশ নিয়ে। বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুপ্রবেশ বন্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না।
অভিষেক জানান, তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কিছুদিনের মধ্যে অসমে আসবেন। এদিন বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি তুলে ধরেই নাম না করে অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অভিষেক। বলেন, বাংলায় কন্যাশ্রী হতে পারলে অসমে কেন হবে না। পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।