দেশে এই মুহূর্তে গ্রীষ্মের দাপুটে ইনিংস চলছে। কিছু কিছু রাজ্যে নামমাত্র বৃষ্টি হলেও, প্রবল দাবদাহে শুকিয়ে যাচ্ছে কুয়ো, পুকুর। টিউবওয়েলের জলস্তরও নেমে গেছে অনেক। যার ফলে জলকষ্ট চলছে নানা এলাকায়। তবে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামের অবস্থা এমনই যে সেখানে একটি মাত্র হ্যান্ডপাম্প ছাড়া আর কোথাও এতটুকু জল নেই! মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান দিন কয়েক আগেই বলেছিলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে রাজ্যের সবকটি গ্রামে ট্যাপকলের মাধ্যমে জল পৌঁছে যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ৩১৩টি ব্লকের মধ্যে ৮৪টি ব্লকেই মারাত্মক জলকষ্ট চলছে গোটা গ্রীষ্মে। কয়েক লক্ষ মানুষ জল পাচ্ছেন না।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মধ্যপ্রদেশের ৪২৫৮ সংখ্যক গ্রামে ৪৮.৬৯ লক্ষ পরিবারের কাছে পৌঁছে গেছে সরাসরি কলের জল। এই জল সরবরাহ স্কিমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩০ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকাও। বসানো হয়েছে ৫.৫৭ লক্ষটি হ্যান্ডপাম্প। তার ৯৫ শতাংশেই জল রয়েছে, সে কথা লেখা আছে সরকারি খাতায়। কিন্তু বাস্তব বলছে অন্য কথা। গ্রীষ্ম পড়তেই জলকষ্ট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে সে রাজ্যে। আঝোয়ার গ্রামের ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে। এই গ্রামে একটিমাত্র হ্যান্ডপাম্পে জল আছে। পঞ্চায়েত থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, প্রতিটি পরিবার সেই পাম্প থেকে দু’পাত্র করে জল নিতে পারবেন। তাতেই সারতে হবে সারাদিনের যাবতীয় কাজ, খাওয়া, রান্না– সব।
শুধু আঝোয়ার নয়, বারবমী জেলার লাইঝাপি গ্রামের বাসিন্দারা আবার অন্য সমস্যার মুখোমুখি। সেখানে এমনই জলকষ্ট, সে গ্রামের ছেলেদের বিয়েই হচ্ছে না কার্যত। কারণ কোনও মেয়ে বিয়ে করে এই গ্রামে এসে থাকতে রাজি নয়। জলের সমস্যার জন্য বিয়ের পরে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সে গ্রামের বাসিন্দা গ্যানি বাই বলেন, ‘৩ কিলোমিটার দূরের একটি হ্যান্ডপাম্প থেকে জল আনি আমরা। পাথুরে, উঁচুনিচু পথ পেরিয়ে যেতে হয়। বাকি সব হ্যান্ডপাম্প শুকিয়ে গেছে।’ দেবরাম নামের আর এক গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘প্রায় দশটি পরিবার থেকে বিয়ের পরে নতুন বৌ বাড়ি থেকে চলে গেছে, শুধু এই জলকষ্টের জন্য।’
লাইঝাপির পাশের গ্রাম গোরেগাঁও, সেমলেট, খৈরিওয়ানি, আমলি গ্রামেরও একই অবস্থা। সকলকেই সাতসকালে জলের পাত্র নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে ৩-৪ কিলোমিটার দূরের পথ। সামান্য জলে চালাতে হচ্ছে গোটা দিন। সরকারি সূত্রের খবর, গ্রামে গ্রামে হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্কের গাড়ি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় জোগান এতই কম, সেই গাড়িগুলির সামনে কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে লাইনে দাঁড়িয়ে। শুধু গ্রামে নয়, শহরগুলিতেও এমনই অবস্থা। ভোপালের বহু এলাকায় জল সরবরাহ কার্যত বন্ধ। মিউনিসিপ্যালিটির জলের গাড়ির উপর ভরসা। কেবল গ্রীষ্মে নয়, গত বছরের নভেম্বর মাসেও মধ্যপ্রদেশের নানা প্রান্ত থেকে জল সমস্যার কথা সামনে এসেছিল।