বঙ্গ বিজেপির যেন শনির দশা চলছে! একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই দলের অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে দলীয় নেতার বিরুদ্ধে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে দলেরই অন্য অংশকে। একের পর এক পুরভোট, উপনির্বাচনে হারের পর সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বড় চেহারা নিয়েছে। এই আবহেই দীর্ঘ সময় পর বাংলা সফরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সরকারি সফর হলেও বঙ্গ বিজেপির নেতাদের অনুনয়, বিনুনয় ঠেলতে না পেরে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হয়েছেন শাহ। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত বঙ্গ বিজেপির কোন কোন নেতার সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে,আর কাদের বাদ দেবেন, তা তিনি ঠিক করে উঠতে পারেননি এখনও পর্যন্ত।
শুধু শাহ-ই নন,বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আঁচ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পর্যন্ত আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। আদি বিজেপি, নব্য বিজেপি, দলীয় বিজেপি নাকি পরিষদীয় বিজেপি, দিলীপ-বিজেপি নাকি সুকান্ত-বিজেপি, এই সমস্যা তো রয়েইছে। আবার গোদের উপর বিষফোঁড়া রাজ্যর শাসক দল তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে থাকা বিজেপি। এই সমস্ত কারণেই বাজেট অধিবেশনের সময় বাংলার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে প্রাতঃরাশ বৈঠক করবেন বলে দু-বার দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত সেই কর্মসূচী নিজেই বাতিল করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যে সাংসদরা তাঁর বাসভবনে ব্রেকফাস্ট করবেন, তার কদিন পরই তাঁরা বিজেপি ত্যাগ করে ঘাসফুল শিবিরে গিয়ে নাম লেখালে তাতে যে তাঁরও মুখ পুড়বে, সেই হিসেব কষেই প্রাতঃরাশ বৈঠক বাতিল হয়েছে।
এবার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই মোদী-শাহরা সাবধানে পা ফেলতে চান বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাহ বিশেষ চপার পাঠিয়ে যাদের দিল্লী আনিয়ে ঘটা করে রাত দুপুরে নিজের বাসভবনে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন, সেইসব নেতাদের অধিকাংশই যে এখন বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে ঘাসফুলে চলে গিয়েছেন, সেকথা নিঃসন্দেহে তিনি ভুলে যাননি। বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই শাহ-র বিশেষ চপার কর্মসূচী নিয়ে বাকিরা তো বটেই, এমনকি বঙ্গ বিজেপির নেতারাই যে আড়ালে হাসাহাসি করেছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সে খবর নিশ্চিতভাবেই তাঁর কানে বহুদিন আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। আবার বর্তমানে বঙ্গ বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে বহু নেতাই যে নিয়মিত ঘাসফুল শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, সেই তথ্যও তাঁর কাছে চলে যাওয়ার কথা।
তাই সবদিক সামলে আলোচনায় নামের তালিকায় কাকেই বা রাখবেন আর কাকেই বা বাদ দেবেন, সেই কঠিন হিসেব সফরের আগে শাহ যে মেলানোর চেষ্টা করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শাহর বঙ্গ সফরে বৈঠকের নামের প্রাথমিক তালিকা তৈরির ভার আবার প্রকারান্তরে বঙ্গ বিজেপির উপরই রয়েছে, যা নিয়ে রীতিমত চাপে রয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারাও। তাঁদের চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্য। সোমবার দিল্লীতে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে ঠিক করতে পারছেন না কাদের সঙ্গে কথা বলবেন, কাদেরই বা বাদ দেবেন। দেখা গেল যাঁদের সঙ্গে বৈঠক করলেন, তাঁরাই কিছুদিন পর বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে গেলেন! সে যাই হোক, সেটা ওঁদের নিজের সমস্যা। আমরা শুধু যাদের বলার এটা বলে দিয়েছি, বৈঠকে থাকুন, নজর রাখুন, যা হচ্ছে যেন আধঘন্টার মধ্যে সেই খবর আমাদের কাছে পৌঁছে যায়।’