গত বছরের ২ মে ছিল রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ। সেদিন ভোটে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বাংলায় ক্ষমতায় ফিরেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। বাংলা দেখিয়ে দিয়েছিল, সে নিজের মেয়েকেই চায়। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। দেখতে দেখতেই আজ আরেকটা ২ মে এসে উপস্থিত হয়েছে। অর্থাৎ খাতায় কলমে পুরো এক বছর এবং নবান্নে হ্যাটট্রিক অর্থাৎ রাজ্যে তৃতীয় তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠার প্রথম বর্ষপূর্তি। এই বিশেষ দিনে টুইট করতে ভোলেননি তৃণমূল নেত্রী। মা-মাটি-মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ‘অব কি বার, ২০০ পার’-এর মতো স্লোগান, মোদি-শাহ-যোগীদের হুঁশিয়ারি, হিন্দুত্ববাদী ভাষণ আর হাজারও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির মাঝে জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের স্লোগান ছিল একটাই – ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। আর বাংলার মানুষ সেই ‘মেয়েকেই’ বেছে নিয়েছেন তাঁদের শাসক নয়, সর্বময় অভিভাবক হিসেবে। একুশের ২ মে বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায়, ২৯৩ আসনের মধ্যে ২১৩ আসনেই ঘাসফুলের জয়জয়কার। দু’শো পেরনোর স্বপ্ন দেখানো গেরুয়া শিবিরের জয়রথ থমকেছে ৭৭-এ। তৃণমূলের এই সংখ্যক আসনে জয়লাভ একেবারে রেকর্ড।
তবে রেকর্ড আরও বাকি ছিল। বিজেপির প্রার্থী হয়ে ভোটে জেতার পর মোহভঙ্গ হয়েছে মোট ৮ জন বিধায়কের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির পথ ধরে জনসেবার মন্ত্রে তাঁরা উজ্জীবিত হয়েছেন। ফলস্বরূপ, ফুল বদল করে তাঁরা নাম লিখিয়েছেন জোড়াফুল শিবিরে। এখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কাজ করতে চান, নতুন পতাকা হাতে নিয়ে এই ইচ্ছাই প্রকাশ করেছেন তাঁরা। যার ফলস্বরূপ অঙ্কের হিসেবে এই মুহূর্তে শাসকদলের বিধায়ক সংখ্যা ২২১। আর বিজেপির শক্তি কমে ৬৯ জন বিধায়ক।
এ তো গেল জনপ্রতিনিধিদের পাল্লা ভারী হওয়ার হিসেবনিকেশ। কিন্তু মমতার দল তো স্রেফ বিধায়ক, সাংসদ নির্ভর নয়। জনতা জনার্দনের সমর্থন তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি কাম্য। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেই নাগরিক পরিষেবায় জোর দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। একে একে কন্যাশ্রী, সবুজশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তাই দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে। এ সবই নেত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। আর এসব প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের জনজীবনের মানোন্নয়ন ঘটেছে।
একুশের ভোটের আগেও মমতা বাড়ির মহিলাদের ভাঁড়ারে সঞ্চয়ের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জিতেই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। এখন বাড়ির মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা করে পান ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে। সে অর্থে তৃতীয় মমতা সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্পই এটা। তাই তৃতীয় তৃণমূল সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তির উদযাপনেও সেই জনতার কথাই মাথায় রেখেছেন সুপ্রিমো। কর্মসূচি অনুযায়ী, বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ নবান্নে জেলাশাসকদের বৈঠক। সেখানে আলোচনা হবে ৫ থেকে ২০ মে পর্যন্ত কীভাবে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রচার চলবে রাজ্যজুড়ে।