ফের মোদী সরকারকে একহাত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাই কোর্টে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত জনস্বার্থ মামলা হচ্ছে। কোনও ক্ষেত্রে হাই কোর্টই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করছে। সেই সব মামলার শুনানির সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে সরকারকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। কিন্তু তার ফলে গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি আটকে থাকছে, আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের সামনে এমনই অভিযোগ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগের পিছনে কলকাতা হাই কোর্টের রাজ্যে একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ, রামপুরহাটের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরুর ঘটনারই ছায়া দেখছে রাজনৈতিক শিবির।
পাশাপাশি, একই সঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের একগুচ্ছ সুপারিশের ফাইল মোদী সরকার কেন তিন-চার বছর ধরে আটকে রেখেছে, তা নিয়েও আজ প্রধান বিচারপতিদের সামনে মোদী সরকারকে প্রশ্ন ছুড়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিদের যৌথ সম্মেলনে আজ কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে রীতিমতো তোপ দাগেন মমতা। বাইরে এ বিষয়ে তিনি মুখ না খুললেও সূত্রের খবর, মমতা প্রশ্ন তোলেন, এই ‘টেন্ডেন্সি অব পেন্ডেন্সি’-র কারণ কী? কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রিজিজু যুক্তি দিয়েছিলেন, বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ এলে কেন্দ্র দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মমতা প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সামনেই কড়া গলায় বলেন, “আমি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কোনও ভাবেই একমত নই।” রিজিজুর বক্তব্য ছিল, কেন্দ্রকে কিছু প্রক্রিয়া মেনে বিচারপতি নিয়োগের অনুমোদন দিতে হয়। মমতা পাল্টা সুর চড়িয়ে বলেন, “মানছি আপনাদের কিছু প্রক্রিয়া মানতে হয়। কিন্তু আমাকে বলুন, সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামই নাম সুপারিশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল সই করেছেন। তার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার কেন তা আটকে রেখেছে?”
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা হাই কোর্ট রামপুরহাটের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা শুরু করেছিল। স্কুলে নিয়োগের একাধিক মামলা, নদিয়ার ধর্ষণ, ঝালদার খুনের মামলার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরে স্থগিতাদেশ মিললেও হাই কোর্টের কিছু বিচারপতির রায়ে রাজ্যের শাসক দল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। স্কুলে নিয়োগের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবের ছাড়পত্র দেওয়ার পরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে আইনজীবীদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী আজ সম্মেলনের শুরুতে সে দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, “আইনজীবীদের সংগঠনগুলিকে আদালতে বিচারের সহায়ক পরিবেশ ও শালীনতা বজায় রাখার অনুরোধ করব।”