ফের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী। মোদীর আমলে সংসদীয় রীতিনীতি বুলডোজ করা হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে আলোচনা ছাড়াই সংসদে সরকার পাশ করিয়ে নিচ্ছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল। এতদিন বিরোধীদের মুখেই শোনা যেত এই অভিযোগ। এবার সরব হলেন বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীও। দলীয় সাংসদদের দম দেওয়া পুতুলের মতো ব্যবহার করতে চায় বিজেপি। হুইপ জারির মাধ্যমে ভালোমন্দ না বুঝেই বিলের পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয় বলেও বিজেপির অন্দরের কথা ফাঁস করেছেন তিনি। ফলত চরম অস্বস্তিতে গেরুয়াশিবির।
প্রসঙ্গত, বরুণের প্রশ্ন, “কৃষি আইন বাতিল করার জন্য আনা বিল সংসদে পাশ হয়েছে মাত্র আট মিনিটে। লোকসভায় তিন মিনিট। রাজ্যসভায় পাঁচ মিনিট। এমপিদের মতামত না জেনেই ধ্বনি ভোটে পাশ হয়েছে। অথচ লোকসভার ৫৩৪ জন এমপির মধ্যে ২৫০ জনের পেশা কৃষি। তাও তাঁরা নিজের কথা বলার সুযোগ পেলেন কি?” এভাবেই মোদী সরকারকে একহাত নিয়েছেন তিনি। দলেরই সাংসদ এভাবে সমালোচনা করায় মাথাব্যথা বেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। তাই কেউ কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। যদিও এটি সত্যি যে, নীতির প্রশ্নে অনড় পিলভিটের সাংসদের সঙ্গে গত কয়েক বছরই মোদী-শাহদের মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। তিন কৃষি আইনের সময় তা আরও স্পষ্ট হয়। তাই বরুণ দলের এমপি হলেও তাঁকে ব্রাত্য রেখেছে বিজেপি। ২০২১ সালের বাদল অধিবেশনের প্রসঙ্গ টেনে বরুণ বলেছেন, “সব মিলিয়ে ৩৪ মিনিটে পাশ হয়েছিল ১৮ টি বিল। এতে বিল পাশ হচ্ছে ঠিকই। তবে কি আলোচনা, বিতর্কের সংসদীয় রীতি জলাঞ্জলি দিয়ে সংসদ স্রেফ একটি আইন তৈরির পোস্ট অফিসে পরিণত হচ্ছে?”
উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় এক ইংরেজি দৈনিকে মোদী সরকারের আমলে সংসদীয় গণতন্ত্রকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে কলম ধরেছেন বরুণ। তুলনা টেনেছেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জমানা, কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সঙ্গে। বরুণ গান্ধী বলেছেন, সংবিধান সভায় সংবিধান তৈরির বিতর্ক চলেছিল ১৬৬ দিন। সেরকমই সংসদের আলোচনায় এমপিদের খোলামনের মতামতই গ্রাহ্য হওয়া উচিত। কোনও কিছু চাপিয়ে দেওয়া নয়। মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করে বরুণ বলেছেন, ব্রিটেন হোক বা কানাডা, সেখানকার সংসদে প্রাইভেট মেম্বার বিলকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে তেমনটা নয়। ১৯৫২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় সংসদে মাত্র ১৪ টি প্রাইভেট মেম্বার বিল পাশ হয়েছে। তার মধ্যে জওহরলাল নেহরুর সময়েই ছ’টি। সংসদকে ক্রমশ গুরুত্বহীন করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলেই নিন্দা করেছেন বরুণ।