বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য। সম্মেলন। নিউটাউনের কনভেনশনে সেন্টারে দু’দিনের এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের উদ্বোধনী ভাষণের পর একে একে দেশ-বিদেশের অভ্যাগতরা ভাষণ দেন। শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে জানান ,কেন বাংলায় বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য। তিনি জানান, ৮ স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলার উন্নয়ন। এদিন দেশ ও বিদেশের প্রতিনিধিদের সামনে বাংলার এগিয়ে থাকার কথা তুলে ধরেন মমতা। বাংলায় কেন বিনিয়োগ করবেন, তার ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৯ দেশের ২৫০ শিল্পপতির সামনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাংলা কীভাবে এগিয়েছে সম্প্রতি। কীভাবে আগামী দিনে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি রয়েছে, তাও জানান তিনি।
এদিন মমতা বলেন, “বাংলার উন্নয়ন আটটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে। তার মধ্যে প্রধান হলেন বাংলার মহিলা শক্তি। আমাদের নির্বাচিত মহিলা প্রতিনিধি ৩৮ শতাংশ। সেটা আমাদের একটা বড় শক্তি। আমরা বাংলার মহিলাদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করেছি। করেছি মেয়েদের শক্তি বাড়াতে। তারপর আমরা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্য চিকিৎসা দিচ্ছি। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছি।” তিনি এও বলেন, “বাংলায় রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ শতাংশ। রাজ্যে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৩.৮ গুণ। দেশের থেকে বাংলার জিডিপি হার বেশি।তারপর সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে প্রথম বাংলা। রাজ্যে কোনও কর্মদিবস নষ্ট হয় না। বাংলার যুব সমাজ এতটাই দক্ষ, যে নাসা টু ভাষা তাদের পদচারণা।” বাংলায় জয়গান গেয়ে এভাবেই তিনি বাংলায় আসার আহ্বান জানান বিশ্বের সকল দেশের শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীদের।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কৃষির উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে বাংলা। কৃষকদের ভাতা দেওয়া হয় তাদের কৃষিকাজ ও শষ্যের সুরক্ষায়। কৃষিকে বাঁচিয়ে আমরা শিল্পায়নে উদ্যোগী। আমরা প্রত্যাশী, কৃষি ও শিল্পকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওার জন্য। সেজন্য বাংলা তৈরি। বাংলা স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সামাজিক সুরক্ষা, ই টেন্ডারিং, এমএসএমই- সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। এখানে ল্যান্ড সিস্টেম রয়েছে। তার উপর ভিত্তি করেই পুরুলিয়ায় জঙ্গল সুন্দরী প্রকল্প থেকে শুরু অসোক নগরে শিল্প পরিকাঠামোর উন্নতি করেছি আমরা। বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে বাংলায়। আমরাই প্রথম রাজ্য যারা কোভিডের পর বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করেছি। ২ বছর পর সম্মেলন হচ্ছে। এবার আমরা শিল্পেও এগিয়ে যাব।” তিনি বলেন, বাংলা শুধু পূর্ব ভারতের গেটওয়ে নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতেরও গেটওয়ে। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গেটওয়ে হল বাংলা।
উল্লেখ্য, এদিন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরও তাঁর ভাষণে বাংলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, “বাংলা আজ যা ভাবে, কাল তা ভাবে ভারত। গোপালকৃষ্ণ গোখলের সেই বাণী ধ্বনিত হল রাজ্যপালের মুখে। ভারতের শিল্পপতিদের মধ্যে গৌতম আদানিরা, কুমারমঙ্গলম বিড়লা, সঞ্জীব মেহতা, সজ্জন জিন্দল-রা তো রয়েছেন, এছাড়াও রয়েছেছেন আর বি মিত্তল, ওয়াই কে মোদী, নিরঞ্জন হিরানান্দানি, হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, ওয়াই সি দেবেশ্বর, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, উমেশ চৌধুরী, পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, পুনীত ডালমিয়া-সহ আরও অনেক শিল্পপতি। শুধু দেশের শিল্পপতিরাই নন, বিদেশ থেকে শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীরা এসেছেন বাংলার বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে যোগ দিতে। ৪৯ জন ব্রিটিশ লগ্নিকারী আসছেন। এছাড়া আমেরিকা, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া জার্মানি, বাংলাদেশ, ভুটান, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, জাপান, কেনিয়া-সহ ১৯টি দেশ প্রতিনিধিরা এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রিত হয়ে। এককথায় চাঁদের হাট। এদিনের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মোট ২৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।