দুঃসময় অব্যাহত পদ্মশিবিরে। বাংলায় সদ্যসমাপ্ত দু’টি উপনির্বাচনেও কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে তারা। এই প্রথমবার বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রটি। সাড়ে তিন লাখের রেকর্ড ব্যবধানে তা বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূল। জয়ী হয়েছেন তারকা প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা। স্বাভাবিকভাবেই এমন শোচনীয় হারের পর বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে কৈফিয়ৎ তলব করেছিলেন ক্ষুব্ধ অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা। দিল্লীতে তলব করা হয়েছিল বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে। এবার হারের অন্তর্তদন্ত করে উঠে আসছে বিস্ফোরক তথ্য। আসানসোলের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল দাবি করছেন, হারের পিছনে দায়ী দলীয় অন্তর্কলহ। সূত্র অনুযায়ী, অগ্নিমিত্রা মনে করছেন যে, রাজ্য শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ আসানসোলে বিজেপির জয় চায়নি। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করা হয়েছে। এমনকী রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও অগ্নিমিত্রাকেও বৈঠকে ডাকা হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন অগ্নিমিত্রা। এসব কথা জানিয়ে দিল্লীতে, বিজেপি শীর্ষ নেতাদের কাছে রিপোর্টও পাঠাচ্ছেন অগ্নিমিত্রা। সূত্রের খবর এমনটাই।
উল্লেখ্য, উপনির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছিল, দিলীপ ঘোষ-লকেট চট্টোপাধ্যায়রা চান না যে আসানসোল উপনির্বাচনে জয়ী হোক বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের তীব্র মতানৈক্যের প্রভাব যে ভোটযুদ্ধেও পড়বে, সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল দলের অন্দরেই। এমনকী ১৬ই এপ্রিল উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর যখন অগ্নিমিত্রা পল সাড়ে তিন লক্ষ ভোটের ব্যবধানে শত্রুঘ্ন সিনহার কাছে হারলেন, সেদিনও এমন ফিসফাস শোনা যাচ্ছিল কান পাতলেই। তবে শীর্ষ নেতৃত্বকে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বে রিপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি দলে তো বটেই, দলের বাইরেও যথেষ্ট আলোড়ন ফেলবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আসানসোল উপনির্বাচনে হারের পর থেকে বিজেপির অন্দরে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। একের পর এক নেতারা রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে তোপ দেগে পদত্যাগ করছেন। কার্যত বঙ্গ বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। যা সামাল দিতে দিশেহারা নেতৃত্ব। এমতাবস্থায় রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও সমালোচনার মুখে। এরপর হারের নেপথ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের রিপোর্ট যদি অগ্নিমিত্রা দিল্লীতে পাঠান, তাহলে তা নিয়ে দলের আভ্যন্তরীণ মতানৈক্য চরমে উঠতে পারে। এমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।