সহসা করোনাভাইসের প্রকোপ। একই অর্থবর্ষে দু’বার আঘাত হেনেছে কোভিড। তার জেরে একগুচ্ছ প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ। ফলে অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা প্রভাব ফেলতে পারল না বাংলার আয়কর আদায়ে। বরং আগের সব রেকর্ড ভেঙে আয়কর আদায়ে আনকোরা নজির গড়ল বাংলা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষ শেষে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বাংলায় আয়কর আদায় হল ৫৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবর্ষের তুলনায় তা ৪৩.৩ শতাংশ বেশি। দফতরের কর্তারা বলছেন, এর আগে কখনও বাংলার আয়কর আদায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সীমা পেরোয়নি। এবার নজির গড়ল বাংলা। যে কোনও রাজ্যের আয়কর আদায়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকে শিল্পমহলের। অর্থাৎ কর্পোরেট ট্যাক্সেই ঝুলি পূর্ণ হয়। এই পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার, বাংলায় শিল্পমহলের আয় গত এক বছরে যথেষ্ট সন্তোষজনক। বিগত অর্থবর্ষের গোড়ায় এপ্রিল-মে মাস জুড়ে চরম সঙ্কট ডেকে এনেছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তা মিটতে না মিটতেই জানুয়ারিতে সংক্রমণ ফের বেলাগাম। আশঙ্কা ছিল, এর জেরে সাধারণ মানুষের আয় কমবে। মার খাবে শিল্প। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে রাজস্ব আদায়ে। কিন্তু জিএসটি ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে, বাংলার রাজস্ব আদায়ের হার এবার অত্যন্ত সদর্থক। তাকে যোগ্য সঙ্গত করল আয়কর আদায়ও।
আয়কর ভবন সূত্র অনুযায়ী, দেশে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত মোট আয়কর আদায় হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। প্রথম তিনে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও দিল্লী। আদায়ের নিরিখে নবম স্থানে বাংলা। এরাজ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স বাবদ এক বছরে রাজস্ব এসেছে প্রায় ৩২ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকার। দপ্তরের কর্তারা বলছেন, এই প্রথমবার বাংলায় শিল্পমহলের থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি কর আদায় হল। বছর দু’য়েক আগেও দেশে কর্পোরেট করের হার ছিল ৩০ শতাংশ। কল-কারখানার চাকা ঘোরাতে কেন্দ্র সেই করের হার ধাপে ধাপে নামিয়ে আনে অনেকটাই। শর্তসাপেক্ষে ১৫ শতাংশ আয়করের সুবিধাও দেওয়া হয় কিছু কিছু শিল্প সংস্থাকে। এরপরও এত বিপুল টাকা আদায়কে রাজ্যের শিল্প-সাফল্য হিসেবেই দেখছেন ইনকাম ট্যাক্স আধিকারিকরা। করোনার প্রভাব সত্ত্বেও গত অর্থবর্ষে দেশে ভালো বাজার পেয়েছে ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। তার প্রভাব যেমন আয়কর আদায়ে পড়েছে, তেমনই সাধারণ করদাতাদের তরফেও আশানুরূপ রাজস্ব মিলেছে বলে দাবি করেছেন দফতরের কর্তারা।
