ঘৃণা, ধর্মান্ধতা, অসহিষ্ণুতা ও অসত্যের এক সর্বনাশ আজ আমাদের গ্রাস করছে। গোটা দেশকে স্থায়ী মেরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে কেন্দ্রের মোদী সরকার ও শাসক দল। এবার এমনই গুরুতর অভিযোগ করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তাঁর দাবি, পোশাক, খাবার, বিশ্বাস, উৎসব বা ভাষা, যাই হোক না কেন, দেশবাসীকে দেশবাসীর বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এবং বিরোধের শক্তিগুলিকে প্রকাশ্যে এবং গোপনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, একটি সর্বভারতীয় ইংরাজি দৈনিকের জন্য কলম ধরেছেন সোনিয়া। নিবন্ধের শিরোনাম, ‘একটি ভাইরাস আমাদের গ্রাস করছে।’ তাতে দেশের চলতি পরিস্থিতির বর্ণনা করে তিনি বিভেদের রাজনীতির জন্য কাঠগড়ায় তুলেছেন কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদের। নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
সোনিয়া লিখেছেন, বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু রূঢ় বাস্তব হল যে বহু শতাব্দী ধরে গড়ে ওঠা বৈচিত্র্যের উপাদানগুলিকে আমাদেরকে বিভক্ত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাতে গিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশ্রয় নিয়েছেন। বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে সোনিয়া নিবন্ধের শেষে গীতাঞ্জলি থেকে উল্লেখ করেছেন কবির কালজয়ী লাইন, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য…।’ সোনিয়া দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গেও বিভেদের রাজনীতির বিপদের প্রসঙ্গ এনেছেন। বলেছেন, ধর্মান্ধতার ক্রমবর্ধমান পরিবেশ, ঘৃণা ও বিভেদের বিস্তার অর্থনৈতিক উন্নতির ভিতকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েক মাসে বিভিন্ন মঞ্চ থেকে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসায় উস্কানি দেওয়ার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা সাধু সমাজের লোকজন। হরিদ্বারের একটি ধর্ম সংসদ থেকে মুসলিম নিধনের ডাক দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিকে ‘ঘৃণার ক্রমবর্ধমান কোরাস’ বলে আখ্যায়িত করে কংগ্রেস সভানেত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁর মতে, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের আদর্শের বিরোধী সকল ভিন্নমত ও মতামতকে নির্মমভাবে দমিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করে রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্ণ শক্তি তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে। এরপরেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করে সোনিয়ার বক্তব্য, তিনি এর বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না। এতে হিংসা, বিদ্বেষ ছড়ানোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এক ধরনের প্রশ্রয় পাচ্ছে।