সাফল্যের নতুন নজির গড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এক বছরে ১৬২৩টি শিশুর হার্টের ফুটোর অপারেশন করে প্রাণ বাঁচাল শিশুসাথী প্রকল্প। অত্যন্ত কার্যকরী এই প্রকল্প দুঃস্থ বাবা-মায়েদের মুখে হাসি ফোটানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কারণ, সব কটি বাচ্চারই অপারেশন হয়েছে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। রাজ্য স্বাস্থ্যদফতরের এক সাম্প্রতিক পর্যালোচনা বৈঠকেই এই তথ্য উঠে এসেছে। বিগত অর্থবর্ষ জুড়ে অপারেশনগুলি হয়। এর মধ্যে ২০৪টি অপারেশন হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। ১১৫টি অপারেশন করে সরকারিক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আছে পিজি হাসপাতাল। ১৪১৯টি অপারেশন হয়েছে বিভিন্ন বড় বেসরকারি হাসপাতালে। এপ্রসঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞররা জানান, হৃদপিণ্ডের বাম ও ডান অলিন্দের মাঝে ফুটো বা এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট (এএসডি), বাম ও ডান নিলয়ের মাঝে ফুটো বা ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট (ভিএসডি), পিডিএ বা পেটেন্ট ডাক্টাস আর্টেরিওসাস বা পালমোনারি ধমনী ও মহাধমনীর মধ্যে বিপজ্জনক সংযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিশুদের অপারেশন করবার দরকার পড়ে। না হলে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা থাকে।
উল্লেখ্য, শিশুসাথীর সাফল্যের পিছনে গ্রামবাংলায় কর্মরত আয়ূষ ডাক্তারদের ভূমিকাও কম নয়। রাষ্ট্রীয় শিশু স্বাস্থ্য কার্যক্রমের আওতায় কর্মরত এইসব চিকিৎসকরাই হার্টের জন্মগত ত্রুটি থাকা বাচ্চাদের চিহ্নিত করছেন। স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রতে গিয়ে বাচ্চাদের হার্ট সাউন্ড শুনে অসুস্থ বাচ্চাদের শনাক্ত করছেন তারা। শুধু হার্টের ফুটোই নয়, ৪৭টি অসুখের এক দীর্ঘ তালিকা ধরে সংশ্লিষ্ট সমস্যা আছে কি না চিহ্নিত করছেন তাঁরা। মেয়েদের কতগুলি কৈশোরকালীন সমস্যাও চিহ্নিত করা হচ্ছে এই উদ্যোগে। শিশু-কিশোর-কিশোরীদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা চিহ্নিত হলে তাকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে বলা হয়। সমস্যা ধরা পড়লে সেই রিপোর্ট নিয়ে আরবিএসকে মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে হয়। এমওরা তখন শিশুর নানা জরুরি নথিপত্র, বাবা-মায়ের ফোন নম্বর ও বাচ্চার দু’কপি ফটো সমেত জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-৩-এর অফিসের শিশুসাথী বিভাগে নাম লেখাতে পাঠান। এরপর জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা শিশুদের নামের তালিকা ধরে তা সংযুক্ত হাসপাতালগুলিতে পাঠান। অনুমোদন আসার পর বাচ্চাটির অস্ত্রোপচার হয়। ব্লক থেকে বাচ্চাদের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়। দিল্লির এই প্রকল্পের প্রধান রূপকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের উপদেষ্টা ডাঃ অরুণ সিং বলেন, “আরবিএসকে বাস্তবায়িত করে কেরলের মতো স্বাস্থ্যে অগ্রণী রাজ্য আরও এগিয়েছে। গত ২-৩ বছরের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার ১১ থেকে আরও কমিয়ে ছয়ে আনতে পেরেছে ওরা। বাংলাতেও ভালো কাজ হচ্ছে।”
