একুশের বিধানসভা ভোটের পর থেকেই শুরু হয়েছে বিজেপির তথৈবচ দশা। ক্রমশ ভাঙন ধরেছে দলের অন্দরে। এবার ফের প্রকাশ্যে এল পদ্মশিবিরের সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র। প্রসঙ্গত, একদিকে নিচুতলা থেকে কর্মী তুলে আনা ও অন্যদিকে স্থানীয় স্তরে নতুন সমর্থক তৈরি, দেশজুড়ে এভাবেই সাংগঠনিক ভিত্তি প্রস্তুত করে বিজেপি। আর সেদিক থেকে কেন্দ্রের শাসকদল মূলত তিনটি কমিটির উপর নির্ভরশীল—বুথ, শক্তিকেন্দ্র এবং মণ্ডল। গেরুয়াশিবিরে সাধারণত তিন থেকে সাতটি বুথ নিয়ে তৈরি হয় একটি শক্তিকেন্দ্র। আর ৫০ থেকে ৭০টি বুথ নিয়ে একটি মণ্ডল। এই মুহূর্তে বাংলায় সেগুলি কার্যত বন্ধ। রাজ্যজুড়ে পদ্ম পার্টির ১২৬৩টি মণ্ডল, ১৪ হাজারের বেশি শক্তিকেন্দ্র এবং ৭৮ হাজারের বেশি বুথের সভাপতি কিংবা গোটা কমিটিই প্রায় নিষ্ক্রিয়। সাংগঠনিক ভিত নড়ে যাওয়ায় উধাও পদ্ম-ঝান্ডা ধরার লোকও। ফলে নতুন করে এই তিনটি কমিটি সাজাতে পদে পদে হিমশিম খাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দৃশ্যের উদাহরণ হিসেবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের কথায় আসা যাক। আজ, মঙ্গলবার ওই কেন্দ্রে ভোট। মোট বুথের সংখ্যা ১৮৭৬টি। রাজ্য বিজেপি অফিসের কল সেন্টার থেকে বারবার ফোন করা হলেও তার অর্ধেক অর্থাৎ, প্রায় এক হাজার বুথ সভাপতি সাড়াই দেননি। শুধু তাই নয়, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, আসানসোল (উত্তর), বারাবনি সহ একাধিক বিধানসভা এলাকায় পাঁচজনের বেশি মণ্ডল সভাপতি বসে গিয়েছেন। সব মিলিয়ে আজ ওই কেন্দ্রের ৫০ শতাংশের বেশি বুথে বিজেপি এজেন্ট দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে নেতৃত্ব। সুকান্ত মজুমদার দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাস কেটে গেলেও এই কমিটিগুলি গঠন হয়নি। কবে হবে, তাও অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, দলেরই এক শীর্ষ নেতা তুলে ধরেছেন বাস্তব পরিস্থিতি। তিনি জানান, বিধানসভা ভোটের পর অধিকাংশ বুথ এবং মণ্ডল সভাপতি বসে গিয়েছেন। অনেক জায়গায় নিচুতলার এই নেতারা জার্সি বদল করে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। কেউ কেউ আবার পার্টিতে থাকলেও সংশ্লিষ্ট কমিটি কিংবা পদে থাকতে রাজি নন। কেন্দ্রীয় নেতাদের অদূরদর্শিতার জেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলেও দাবি ওই নেতার। কেমন অদূরদর্শিতা? তাঁর কথায়, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ তিন মাস আগে কলকাতায় এসে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মণ্ডল সভাপতিদের বয়স ৪৫ কিংবা তার কম হতে হবে। বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক আবহে যেখানে বিজেপি করার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে এই সিদ্ধান্তে কমিটি গঠনের কাজ আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে। ৪৫ বয়সের কম সভাপতি খুঁজতে গিয়ে নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে। বাদ পড়ছেন আদি নেতারা। আবার নব্যদের মানতে চাইছে না জেলা নেতৃত্ব। এমনকী, মণ্ডল ও বুথের নয়া সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে বিজেপির সাংসদ ও বিধায়কদের মধ্যে চলছে সংঘাত। অধিকাংশ জেলায় এই দুই পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা পৃথক পছন্দের তালিকা তৈরি করছে। জেলা সভাপতিরা আবার তা মানতে চাইছেন না। ফলে নতুন কমিটি গঠন কার্যত বিশ বাঁও জলে।