চিত্র সেই এক। নেই কোনো বদল। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর একের পর এক বিজেপিশাসিত রাজ্যে প্রতিদিন ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে দলিতদের মর্যাদা ও সম্মান। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ সর্বত্রই ছবিটা এক। সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাংলা। এখানে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য স্বতন্ত্র উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে রাজ্য সরকার। উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি, দলিত-আদিবাসীদের আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে। সরকারি আনুকূল্যে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষার চর্চাও হয়। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে চলা বিজেপির দলিতবিরোধী আগ্রাসন রুখতে বিকল্প পথ দেখাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। গেরুয়াশিবিরের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে চলেছেন নমশূদ্র, মতুয়া, রাজবংশী, কুর্মি সমাজ। মে মাসের গোড়ার দিকে নদীয়ার কল্যাণীতে মহাসম্মেলনের ডাক দিয়েছে সারা ভারত নমশূদ্র বিকাশ পরিষদ।
উল্লেখ্য, এই আয়োজনকে জাতীয় অধিবেশনও বলছেন আয়োজকরা। কারণ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলিত ও উদ্বাস্তু সমাজের ১০ হাজার প্রতিনিধিকে নিয়ে প্রথম দিন হবে মহাসম্মেলন। দলিত-উদ্বাস্তু উন্নয়নে বিকল্প পথের দিশারী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মূল বক্তা রেখে দ্বিতীয় দিন মহাজমায়েত হবে। নমশূদ্র বিকাশ পরিষদের কর্তা মুকুল বৈরাগ্যের কথায়, দু-লক্ষেরও বেশি মানুষের জমায়েতকে সম্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে কল্যাণীকে কেন্দ্র করে আশপাশের আসনে শুধু নাগরিকত্বের টোপ রেখে পদ্মফুল ফুটিয়েছিল বিজেপি। দলিত-উদ্বাস্তুদের মহাসম্মেলনের জন্য সেই এলাকা বেছে নেওয়াকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে সব পক্ষ।
প্রসঙ্গত, বিকাশ পরিষদের কর্তা মুকুলবাবু রাজ্যের নমশূদ্র উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানও বটে। তাঁর কথায়, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে নমশূদ্র, মতুয়া, উদ্বাস্তু ও রাজবংশী মানুষকে নাগরিকত্বের টোপ দিয়ে ভোট হাসিল করেছিল বিজেপি। এই সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন যাঁরা, তাঁরা অনেকেই দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ে কর্মরত ছিলেন বা আছেন। যেমন সিবিআইয়ের প্রাক্তন কর্তা উপেন বিশ্বাস। তাঁকেও কি নাগরিকত্ব দেওয়া হবে? তবে কি ভারত সরকার বিদেশি নাগরিককে এহেন উচ্চপদে বসিয়ে রেখেছিলেন? মুকুলবাবুর আরও অভিযোগ, নাগরিকত্বের টোপ যে শুধু ভোটের জন্যই, সেটা এখন দলিত সমাজ বুঝেছে। উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, হরিয়ানা, বিহারে দলিত নিধন চলছে। কখনও ধর্ষণ করে খুন, কখনও পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। আর এই রাজ্যে দলিত-উদ্বাস্তু মানুষের জন্য উন্নয়ন পর্ষদ হচ্ছে। এই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাই তার চেয়ারম্যান হয়ে উন্নয়নের কাজ করছেন। তাই সেখানেই প্রয়োজন এহেন প্রতিবাদের।