এবার থেকে ধৃতদের হাত ও পায়ের ছাপের সঙ্গেই তার চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান এমনকি ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা! হ্যাঁ, লোকসভায় মোদী সরকারের পেশ হওয়া অপরাধী শনাক্তরণ বিল, ২০২২ অনুযায়ী গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির হাত ও পায়ের ছাপের সঙ্গেই তার চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান এমনকি ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। কেবল গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরই নয়, বিলে বলা হয়েছে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ মেনে আটক ব্যক্তিদেরও সমস্ত ধরনের শারীরিক মাপজোক ও নমুনা সংগ্রহ করার অধিকার থাকবে পুলিশ ও কারাকর্মীদের। প্রয়োজনে করা যাবে নার্কো পরীক্ষা ও ব্রেন ম্যাপিং-ও। স্বাভাবিকভাবেই এই বিল ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে সরব হন বিরোধীরা। বিরোধী শিবির আজ এক জোট হয়ে ওই বিলের পেশের বিরোধিতা করে ভোটাভুটি চায়। ভোটাভুটিতে সরকার পক্ষের জয়ের পরে বিলটি পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিলটি লোকসভায় পেশ করার কথা থাকলেও তিনি সে সময়ে অনুপস্থিত ছিলেন। সাধারণত তিনি না থাকলে লোকসভায় বিল পেশের দায়িত্ব নেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে বিলটি পেশ করেন উত্তরপ্রদেশ লখিমপুর খেরি কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়া স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জামিনে রয়েছেন টেনির ছেলে আশিস। বিরোধীদের দাবি, খেরি কাণ্ডে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। তাই ওই ঘটনার পর থেকেই টেনিকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে সরব রয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু ওই বিলটি তাঁকে দিয়ে পেশ করিয়ে সরকার বার্তা দেয় যে উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ নেতা টেনির প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর। স্বভাবতই বিল পেশের সময়ে বিরোধীরা বারংবার টেনির সঙ্গে লখিমপুর খেরি কৃষক হত্যাকাণ্ডের যোগ রয়েছে বলে সরব হন। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী দাবি তোলেন, ওঁর (টেনির) নমুনা নেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, টেনির পেশ করা বিলে বলা হয়েছে দোষী, অপরাধীদের সঙ্গেই গ্রেফতার কিংবা আটক ব্যক্তিদের শারীরিক শনাক্তকরণ ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থা ও কারাকর্মীরা। অর্থাৎ ধৃত ব্যক্তির আঙুলের-তালুর-পায়ের ছাপ ছাড়াও চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। ধৃতের সই ও হাতের লেখার নমুনা, চারিত্রিক গুণাবলী সংগ্রহ করার অধিকার থাকবে পুলিশের। সংগৃহীত তথ্য ভবিষ্যতে প্রয়োজনের জন্য ডিজিটাল ভাবে জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড বুরোর কাছে জমা থাকবে। কোনও ব্যক্তির সংগৃহীত নমুনা সর্বাধিক ৭৫ বছর সংগ্রহ করে রাখা হবে। অনিচ্ছুক ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেন, ‘আইনের মূল প্রতিপাদ্য হল যত ক্ষণ না দোষ প্রমাণিত হচ্ছে তত ক্ষণ কোনও অভিযুক্ত দোষী নন। ১৯২০ সাল থেকে একটি আইন চালু রয়েছে। হঠাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মনে হল আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ফোটো ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। কেন? দেশে কি হঠাৎ অপরাধ বেড়ে গিয়েছে?’
বিরোধীদের মতে, এভাবে নমুনা সংগ্রহ ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘যাঁরা বিচারাধীন কিংবা কেবল সন্দেহের বশে আটক তাঁদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের অধিকার চলে আসবে পুলিশের। যা স্বাধীনতার অধিকারে হস্তক্ষেপ। আর যেখানে তথ্য সুরক্ষা আইন নেই সেখানে ওই আইন আসলে হিতে বিপরীত হবে। তাছাড়া প্রযুক্তিরও ভুল হয়। উন্নত দেশে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সময়েই ভুল হয়ে থাকে। সেখানে ভারতে অপরাধীদের নমুনা সংগ্রহের প্রশ্নে আধুনিক প্রযুক্তি নেই।’’ আরএসপি সাংসদ এন কে প্রেমচন্দ্রনের মতে, ‘‘আমি যদি কোনও ন্যায্য দাবির পক্ষে আন্দোলন করি তাহলে আমার নামে সরকার এফআইআর করে আমার ডিএনএ সংগ্রহ করে নিতে পারবে। এটি মানুষের ন্যূনতম প্রতিবাদের অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা।’ কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারির মতে, ‘ওই বিলে বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহের কথা হয়েছে। যার মাধ্যমে কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে ধৃতদের নার্কো পরীক্ষা কিংবা ব্রেন ম্যাপিং করার অধিকার দেওয়া হচ্ছে।’