সম্প্রতি পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে আপের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্য বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। অমিত শাহ চণ্ডীগড় প্রশাসনের কর্মচারীদের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করতেই চণ্ডীগড়ের দাবি নিয়ে বিতর্ক ফের সামনে এসেছে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান বলেছেন, চণ্ডীগড়ের দাবি তাঁরা কোনওমতেই ছাড়বেন না। বস্তুত, রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে আপ। অমিত শাহ বলেছেন, সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিস আইন সোমবার থেকেই চণ্ডীগড় প্রশাসনের কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, চণ্ডীগড় প্রশাসনের কর্মীরাও সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিস আইনের আওতায় আসবেন। ফলে, তাঁদের অবসরের বয়স ৫৮ থেকে বেড়ে ৬০ বছর হবে। শিক্ষাবিভাগের কর্মীদের ক্ষেত্রে অবসরের বয়স হবে ৬৫ বছর। ‘চাইল্ড কেয়ার লিভ’ বা সন্তানকে প্রতিপালনের ছুটি এক বছরের জায়গায় বেড়ে দু’বছর হবে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মান টুইট করেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ধাপে ধাপে চণ্ডীগড় প্রশাসনে অন্য রাজ্য থেকে কর্মীদের নিয়োগ করছে। এটা পাঞ্জাব রিঅর্গানাইজেশন আইন (১৯৬৬)-র পরিপন্থী। পাঞ্জাব কোনওমতেই চণ্ডীগড়ের উপর ন্যয্য অধিকারের দাবি ছাড়বে না।”
প্রঙ্গত, সম্প্রতি ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড (বিবিএমবি)-এর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদে কেন্দ্র দু’জনকে নিয়োগ করেছেন। পাঞ্জাব (শক্তি) ও হরিয়ানায় (সেচ) দুই অফিসারকে নিয়োগের জন্য কেন্দ্র বর্তমান আইনের সংশোধন করেছে। যা ‘কেন্দ্রের তরফে অযাচিত হস্তক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। তিনি বলেছেন, “অধিকার রক্ষায় আমাদের লড়াই চলবে।” শুধু আপই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তরফেও কেন্দ্রের বর্তমান পদক্ষেপের বিরোধিতা করা হয়েছে। অকালি দলের নেতা দলজিৎ চিমা টুইট করেছেন, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত পাঞ্জাব রিঅর্গানাইজেশন আইনের পরিপন্থী। এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এই সিদ্ধান্তের অর্থ হল, চণ্ডীগড়কে পাঞ্জাবের রাজধানী হিসেবে মান্যতা না দেওয়া। বিবিএমবি-র ঘটনার পর এই সিদ্ধান্ত পাঞ্জাবের ন্যয্য অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল।” অন্যদিকে, কংগ্রেস এই পদক্ষেপকে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছে। কংগ্রেস বিধায়ক সুখপাল সিং খাইরা বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত পাঞ্জাবের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ।’ রাজ্যসভায় পাঞ্জাবের সব এমপিদের প্রতি তাঁর আহ্বান, “ইস্যুটি নিয়ে আপনারা কেন্দ্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করুন। চণ্ডীগড়ের উপর পঞ্জাবের অধিকার কোনওমতেই হাতছাড়া করা সম্ভব নয়।” পাঞ্জাবের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেখানে চণ্ডীগড়ের উপর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজীব-লঙ্গওয়াল চুক্তি (১৯৮৫)-র উদাহরণ টানছেন, সেখানে হিমাচলের হাতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। ২০১১ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর দেশের শীর্ষ আদালত জানায়, পঞ্জাব রিঅর্গানাইজেশন আইন (১৯৬৬) অনুযায়ী চণ্ডীগড়ের ৭.১৯ শতাংশ জমি হিমাচলের। তাই, আইনের যুক্তি দেখিয়ে চণ্ডীগড়ের দাবি ছাড়তে রাজি নয় হিমাচলও।
