আজ নারী দিবস। ফিরে যাওয়া যাক ইতিহাসে। বিগত ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর ভারতের সংবিধান গৃহীত হয় এবং ২৬শে জানুয়ারি ১৯৫০ থেকে কার্যকরী হয়। সংবিধান রচনার জন্য কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৯। ভীম রাও আম্বেদকরকে সংবিধানের জনক বলা হয়। এই সংবিধানে অনেক মহিলারও অবদান ছিল। দেখে নেওয়া যাক একনজরে :
১. আমু স্বামীনাথন :
ইনি কেরলের এক উচ্চ বর্ণের হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৭ সালে ওমেন’স ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। ১৯৪৬ সালে ইনি মাদ্রাজ থেকে কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ইনি ১৯৫২ সালে লোকসভায় ও ১৯৫৪ সালে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন।
২. দক্ষিণী বেলায়ুদান :
ইনি কোচিনে ১৯১২ সালে ৪ঠা জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতা-পূর্ব যুগের এক মহিয়সী দলিত নেত্রী ছিলেন। তিনি দলিতদের বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৪৫ সালে কোচিনের আইন পরিষদের সদস্য হন তিনি। ১৯৪৬ সালে কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন।
৩. বেগম আইজাজ রসুল :
ইনি মালেরকোটার রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির একমাত্র মুসলমান মহিলা সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় ওনাকে।
৪. দুর্গাবাঈ দেশমুখ :
১৯০৯ সালের ১৫ই জুলাই রাজামুন্দ্রিতে জন্মান। ১২ বছর বয়সে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে লবণ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৩৬ সালে অন্ধ্র মহিলা সভা তৈরী করেন। ইনি সংসদ এবং প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয় ওনাকে।
৫. হংসা জিভরেজ মেহেতা :
১৮৯৭ সালের ৩রা জুলাই বরোদাতে জন্মগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ডে সাংবাদিকতা ও সমাজবিদ্যা পড়েন। তিনি একাধারে সংস্কারক, সমাজসেবী, শিক্ষাবীদ ও লেখিকা ছিলেন। তিনি শিশুদের জন্য গুজরাটিতে অনেক বই লেখেন ও অনেক ইংরাজি বই অনুবাদ করেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে তিনি দেশের বিভিন্ন পদে ছিলেন।
৬. কমলা চৌধুরী :
লখনৌতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজ পরিবার ছেড়ে ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেন। ৫৪তম অধিবেশনে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ছিলেন এবং পরে লোকসভার সদস্যা হন।
৭. লীলা রায় :
১৯০০ সালে অসমে জন্মগ্রহন করেন। বেথুন কলেজ থেকে ১৯২১ সালে স্নাতক হন। ১৯৪৭ সালে জাতীয় মহিলা সমিতি গঠন করেন।
৮. মালতী চৌধুরী :
১৯০৪ সালে অধুনা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন। ১৬ বছর বয়সে বিশ্বভারতীতে পড়তে যান। তিনি লবণ সত্যাগ্রহে অংশ নেন। তিনি অনেক সংগঠন তৈরী করেন।
৯. পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায় :
এলহাবাদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পাদক ছিলেন। ৩০ ও ৪০-এর দশকে উত্তরপ্রদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুখ।
১০. রাজকুমারী অমৃত কৌর :
২ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৯ লখনৌতে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতের প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ১৬ বছরে বিদেশে পড়াশোনা ছেড়ে গান্ধীজীর আন্দোলনে শামিল হন। এইমসের প্রতিষ্ঠা করেন। নারী শিক্ষার জন্য সোচ্চার ছিলেন। টিউবারকুলোসিস অ্যাসসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া, সেন্ট্রাল লেপ্রসি অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৪ সালে উনি মারা যাওয়ার পর নিউ ইওর্ক টাইমস তাঁকে ‘এ প্রিন্সেস ইন হার নেশন্স সার্ভিস’ বলে আখ্যা দেয়।
১১. রেনুকা রায় :
আইসিএস সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও চারুলতা মুখোপাধ্যায়ের কন্যা তিনি। লন্ডনে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে স্নাতক হন।
১৯৪৩ -৪৬ সালে সেন্ট্রাল লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য হন। ১৯৫২-৫৭ পশ্চিমবঙ্গের লেজিস্লেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য হন। ১৯৫৭ ও ১৯৬২ তে তিনি মালদা থেকে সাংসদ ছিলেন।
১২. সরোজিনী নাইডু :
১৮৭৯ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি হায়াদ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম মহিলা কংগ্রেস সভাপতি। তাঁকে নাইটিঙ্গল অফ ইন্ডিয়া বলা হয়। তিনি ১৯৩০, ১৯৩২, ১৯৪২-৪৩ সালে কারাবাসে যান আন্দোলনের জন্য।
১৩. সুচেতা কৃপালীনি :
১৯০৮ সালে হরিয়ানার আম্বালায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেন। কংগ্রেসের মহিলা শাখা তৈরী করেন ১৯৪০ সালে। ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
১৪. বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত :
১৯০০ সালের ১৮ই অগস্ট এলহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সম্পর্কে জহরলাল নেহেরুর বোন। ১৯৩২-৩৩, ১৯৪০, ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি কারাবাসে জানে। ১৯৩৭ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৫৩ সালে তিনি রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরমাচিত সভাপতি হন।
১৫. অ্যানি ম্যাস্কারিন :
কেরলের ক্যাথলিক পরিবারে জন্মও হয়। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৩৯-৪৭ সালের মধ্যে বহুবার কারাবাস করেছেন। ১৯৫১ সালে কেরল থেকে প্রথম মহিলা সাংসদ। ১৯৪৯-৫০ সালে তিনি স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।