রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়া ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়ার পরই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। অবশেষে সমস্ত আশঙ্কাকে সত্যি করে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে মস্কো। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার মিলিটারি অপারেশন চলছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দেশের মাটিতে পা দিয়েই শান্তিপুরের গবার চর এলাকার বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস জানালেন, ‘বেঁচে ফিরব ভাবিনি’।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অতর্কিতেই ইউক্রেনে মিলিটারি অপারেশন শুরু করে রাশিয়া। আচমকা যুদ্ধ শুরু হওয়ায় ওই দেশে আটকে পড়েছেন বহু ভারতীয়। সমীরও তাঁদের মধ্যেই ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। তাঁর কথায়, ‘টানা পাঁচ দিন প্রায় না খাওয়া অবস্থায় বিমানবন্দরে ঘুরে বেরিয়েছিলাম। ভাবতে পারিনি বেঁচে বাড়ি ফিরব।’ এখনও তাঁর চোখেমুখে আতঙ্ক। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফেরা সমীর বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। চার মাস ধরে কাগজপত্র বানানোর চেষ্টা করছিলাম। তা হাতে পাওয়ার আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। লাভ তো হলই না, বরং ক্ষতি হল।’
উল্লেখ্য, সমীর পেশায় তাঁত শ্রমিক। বলা চলে, নিজের ভাগ্য পরীক্ষার জন্যই ইউক্রেনে পাড়ি দিয়েছিলেন। আসলে করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন তাঁতের কাজ বন্ধ ছিল। আর্থিক অনটনে ভুগছিল পরিবার। ইউক্রেনে যাওয়ার জন্য ৬ মাস আগে নিজের তাঁত বিক্রি করে দেন সমীর। আরও কিছু টাকা সুদে ধার নিয়ে ইউক্রেনের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আশা ছিল, বেশি আয় করে পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু, ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ সেই আশা কেড়ে নিল।
যুদ্ধের অভিজ্ঞতা যে কী ভয়ংকর, তা-ও উঠে এসেছে সমীরের জবানিতে। তিনি বলেন, ‘কিয়েভের ওপর যখন রুশ সৈন্য আক্রমণ করতে শুরু করল, তখন ওখানেই ছিলাম। পরপর বোমা পড়ছে। আমরা আতঙ্কে সিঁটিয়ে ছিলাম। এরপরেই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের বলা হল কিয়েভ ছেড়ে দিতে। নিজেদের জিনিসপত্র কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। দু-তিনটে পোশাক নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। ট্রেনের টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, সব বুকড ছিল। এরপরে গাড়ি বুক করে কিয়েভ ছেড়ে বেরনোর চেষ্টা করি।’
সমীরের সংযোজন, ‘যে রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি যাচ্ছিল সেখানেই রুশ হেলিকপ্টার বোমা ফেলছিল। সামনে বোমা পড়লে চালক গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা ধরছিলেন। কী ভয়ংকর সেই স্মৃতি!’ তিনি আরও বলেন, ‘পোল্যান্ড সীমান্তে দুু’দিন আটকে ছিলাম। তখন শুধু ইউক্রেনিয়ানদের বেরতে দিচ্ছিল। পরে শুনলাম ভারতীয়রা অন্য সীমান্ত দিয়ে বেরচ্ছে। ৪০ কিমি হেঁটে চেক পোস্টে পৌঁছেছিলাম। চেক পোস্টেই আটকে দিল। ওখানেও দু’দিন আটকে ছিলাম। ছ’দিন না ঘুমিয়ে, না খেয়ে হেঁটেছি। তারপরে দূতাবাসের তরফ থেকে আমাদের উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।’