রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই ছোট হতে শুরু করেছে দল। ফলস্বরূপ এত বছরে যা কখনও হয়নি, একুশের বিধানসভা নির্বাচন তাই করে দেখিয়েছে। অঘটন ঘটিয়ে বাংলার পরিষদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথমবার বিধানসভায় নেই কোনও বাম বিধায়ক। যদিও ছোট কলেবরেও আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু তাতেই বড়সড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এবার এমনই আত্মসমালোচনা উঠে এল কলকাতা জেলা সিপিএমে। খাতায়-কলমে সদস্য যতই থাক, কাজে তাঁরা বেশির ভাগই ‘নিষ্ক্রিয়’ বলে মেনে নিচ্ছে দলই।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার থেকে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুরু হয়েছে সিপিএমের ২৫তম কলকাতা জেলা সন্মেলন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অদূরে দলের তাবড় রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন শমীক লাহিড়ী। সম্মেলনে যে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে, তাতেই রয়েছে দলের কাজের বিস্তর আত্মসমালোচনা। সূত্রের খবর, প্রতিবেদনের রেশ ধরে সম্মেলনের প্রতিনিধিদের একাংশ নেতাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
কলকাতা জেলার ৭৭ পাতার প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে দেখানো হয়েছে, বামফ্রন্ট সরকার বিদায়ের সময়ে ২০১১ সালে জেলায় সিপিএমের সদস্য সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৩৭০। পরের ১১ বছরে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে ১১ হাজার ১০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই ১১ হাজার মতো সদস্যের ঘাড়ে অনেক দায়িত্ব, কাজ অনেক। কিন্তু ১১ হাজার ১০ জনকে দিয়ে বর্তমান শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে যে আঘাত করা সম্ভব, তা-ও আমরা করতে পারছি না। কারণ বাস্তব হচ্ছে যে পার্টি সদস্যদের বেশির ভাগই নিষ্ক্রিয়।’
প্রতিবেদনের মতে, টানা সাড়ে তিন দশক মানুষের সমর্থনে জিতে আসার পরে যখন সেই সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে, সেই সময়ে হতাশা তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি থাকতেই পারে। কিন্তু যে ‘আদর্শগত ভিত্তি’র উপরে কমিউনিস্ট সংগঠন দাঁড়িয়ে থাকে, তা ঠিক থাকলে এই পরিস্থিতিতেও সক্রিয় আন্দোলন এবং লড়াই চালানো যায়। গত মাসেই হাওড়ার জেলা সম্মেলনে এসে সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য হান্নান মোল্লা মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যে দল এখন কর্মসূচী করে কিন্তু তারা আন্দোলনে নেই। এবার হান্নানের সুরই লক্ষ্য করা গেল কলকাতা জেলা সিপিএমের প্রতিবেদনে।
দলের রাজ্য দফতরের সঙ্গে কার্যত রাস্তার এ’পার-ও’পারের দূরত্ব হওয়ার কারণে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ কলকাতা সিপিএমের অনেক বেশি। দলের তিন জন পলিটবুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য কলকাতায় দলের কাজের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত। তাঁদের ‘পরামর্শ’ সব সময়েই পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নিষ্ক্রিয়তার সমস্যা দলকে ভোগাচ্ছে। সূত্রের খবর, সম্মেলনের প্রথম রাতে প্রতিনিধিদের একাংশ নেতাদের সক্রিয়তার অভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নেতারা আজকাল বাড়ি ও পার্টি অফিসের বাইরে যান না!