দেশজুড়ে সাইবার ক্রাইম প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজন পরিকাঠামো। তবে বিজেপিশাসিত একাধিক রাজ্যে সাইবার অপরাধ ঠেকানোর জন্য তেমন কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি এখনও পর্যন্ত। চলতি বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছে হোম স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট। তাতেই দেশের ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলির বেহাল দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সংসদের দুই কক্ষে পেশ করা ওই রিপোর্টের ৪১ নম্বর পাতায় হোম স্ট্যান্ডিং কমিটি জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী পাঞ্জাব, রাজস্থান, গোয়া, অসমের মতো রাজ্যগুলিতে একটিও সাইবার ক্রাইম সেল নেই। অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশে মেরেকেটে একটি বা দু’টি সাইবার ক্রাইম সেল রয়েছে। এই রাজ্যগুলির বেশিরভাগই বিজেপিশাসিত। এই রাজ্যগুলিকে ‘ডবল ইঞ্জিন’সরকার বলে দাবি করে পদ্মশিবির।
এ বিষয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির রিপোর্ট বলছে, এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে বাংলা। এ রাজ্যে মোট ৩৩টি সাইবার ক্রাইম সেল রয়েছে। মহারাষ্ট্রে সাইবার সেল ৪৭টি। পাশাপাশি উড়িষ্যাতে এই সেলের সংখ্যা ৩৪। সেখানে বিজেপি শাসিত গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশে সাইবার ক্রাইম সেলের সংখ্যা ১০টি। গুজরাত ও ত্রিপুরার মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যে সাইবার ক্রাইম সেল মাত্র একটি। ২০১৭ থেকে ২০২০—এই চার বছরে দেশে নথিভুক্ত সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত মামলা ক্রমশ বেড়েছে। তা উল্লেখ করে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। তাতে হোম স্ট্যান্ডিং কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশের সমস্ত রাজ্যকে জেলাভিত্তিক সাইবার সেল গড়ে তুলতে হবে। বিষয়টি এতখানি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গোয়া, অসমে একটিও সাইবার ক্রাইম সেল নেই। উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে সাইবার সেলের সংখ্যা মাত্র দু’টি।
পাশাপাশি, আরও সুপারিশ করা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যকে সাইবার ক্রাইমের ম্যাপ তৈরি করে ‘হট স্পট’ চিহ্নিত করতে হবে। এতে অপরাধের দ্রুত কিনারা করা সম্ভব হবে। তাছাড়া, স্ট্যান্ডিং কমিটি বর্তমান সাইবার সেলগুলিকে ডার্ক ওয়েব মনিটরিং সেলে উন্নীত করতে বলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেলের সংখ্যা আরও বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির আরও প্রস্তাব, সাইবার ক্রাইমের মোকাবিলায় পুলিসকর্মী নিয়োগের পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে সাইবার এক্সপার্ট ও পেশাদার তথ্য-প্রযুক্তিবিদ নিয়োগে উৎসাহ দিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আন্তঃরাজ্য সাইবার ক্রাইমের তদন্তে ভিন রাজ্যে যাওয়া তদন্তকারী অফিসারদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য যাতে সব ধরনের সাহায্য করে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে। উল্লেখ্য, সাইবার অপরাধে কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তদন্তে গেলে সেখানকার পুলিশের তেমন সহযোগিতা মেলে না বলে প্রায়শই অভিযোগ উঠেছে।