অব্যাহত দুশ্চিন্তার দিনযাপন। পানীয় জল, খাবার বাড়ন্ত ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের দেখা নেই, প্রাণ হাতে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়রা। সংকটের মধ্যে দেশবাসীদের ঠেলে দিয়ে নিরুত্তর মোদী সরকার। দূতাবাসের কর্মীরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ইউক্রেনের রাতের তাপমাত্রা মাইনাস সাত ডিগ্রিতে নেমে যাচ্ছে। গায়ে বরফ পড়ছে। মাথার উপরে ছাদ নেই। খাবার ফুরিয়ে গিয়েছে, জল শেষ। এমন ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়রা। গত পাঁচ দিনে মাত্র দেড়শো জন ভারতীয় পোল্যান্ডে ঢুকতে পেরেছেন। মাঝেমধ্যেই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। তিন থেকে চারদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের, তীব্র শীতে অভুক্ত থেকে মেজাজ হারাচ্ছেন পড়ুয়ারা। এই মুহূর্তে পোল্যান্ডের মেডিকা সীমান্তের অবস্থা এরকমই।
প্রসঙ্গত, পোল্যান্ড-ইউক্রেন সীমান্তে রয়েছে মোট নটি বর্ডার। যার মধ্যে মেডিকা, মানুষ পারাপারের পক্ষে সব থেকে বড়। চেক পয়েন্ট ওয়ান, চেক পয়েন্ট টু এবং পোলিশ গার্ড; এই তিনটি পথ পেরিয়েই তবে পোল্যান্ডে প্রবেশ করা সম্ভব। সেখানে এক জন পড়ুয়া যদি তাঁর ইউক্রেনের পাসপোর্ট এবং স্টুডেন্ট কার্ড দেখায়, তবেই সে ১৫ দিন পোল্যান্ডে থাকার অনুমোদন পাবেন। কিন্তু আদপে চিত্রটা অন্যরকম। চেক পয়েন্ট ওয়ান থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে থামছে বাস। সীমান্ত পেরোতে সেখান থেকেই হাঁটা শুরু করতে হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়া, তীব্র শীত। চেক পয়েন্ট ওয়ানে পৌঁছানোর পরই ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা প্রাথমিক বাছাই সারছেন। সেখান থেকে ছয় কিলোমিটার হেঁটে চেক পয়েন্ট টুতে যেতে হচ্ছে। চেক পয়েন্ট টু থেকেই অভিবাসনের অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে।
পারাপারের জন্য এখানে দুটো লাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটা ইউক্রেনের অধিবাসীদের জন্য। আরেকটি বিদেশিদের জন্য। এখানেই শুরু হচ্ছে গোলমাল। ইউক্রেন প্রথমে নিজেদের দেশের বাচ্চাসহ মহিলা, তারপরে মেয়েদের ছাড়ছেন। সবশেষে বিদেশিদের ছাড়ছেন। এই বিদেশিদের মধ্যে থেকে ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদেরকেই মূলত হেনস্থা করা হচ্ছে। ছোট দল হলে তবু দ্রুত রেহাই মিলছে। কিন্তু যখনই ৪০-৫০ জনের পড়ুয়ার দল হাজির হচ্ছে, তখন ধৈর্য হারাচ্ছেন ইউক্রেনের নিরাপত্তারক্ষীরা। যদিও এর নেপথ্যে মোদী সরকারের ভ্রান্ত বিদেশনীতিই কাঠগড়ায়।
উল্লেখ্য, পাঁচশো মিটার ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ পেরিয়ে পৌঁছতে হচ্ছে পোলিশ নিরাপত্তারক্ষীর কাছে। সেখান থেকে সহজেই পোল্যান্ডে যাওয়া যাচ্ছে। পোল্যান্ড সীমান্তে ভারতীয় দূতাবাসের দুই আধিকারিক থাকছেন। কিন্তু কিভের ভারতীয় দূতাবাস থেকে কোনও আধিকারিক ইউক্রেন সীমান্তে নেই। ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে কেউ থাকলে পড়ুয়াদের এইভাবে হেনস্থার শিকার হতে হত না। আটকে থাকা পড়ুয়াদের খাবারের ব্যবস্থা করতে গত কাল বাধ্য হয়ে একটা ছোট ট্রাক নিয়ে পোল্যান্ডের ভারতীয় দূতাবাসের আধিকারিক সীমান্ত পেরিয়েছিলেন। কিন্তু অপেক্ষারত প্রায় দুহাজার ভারতীয়ের কাছে ওইটুকু খাবার এতোই সামান্য যে সকলের ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে অক্ষম। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের ও মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের জীবনকে সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে আরও।