কেটে গেছে তিন দিন। অতিক্রান্ত ৭২ ঘণ্টা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে হামলার প্রকোপ। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র-ট্যাঙ্ক-গুলির সামনে কঠোরভাবে লড়ছে গোটা ইউক্রেন। রাজনীতিক থেকে খেলোয়াড়, সাধারণ মানুষ, এমনকী মহিলারা পর্যন্ত হাতে তুলে নিয়েছেন কালাশনিকভ, গ্রেনেড লঞ্চার। কিভ দখল করতে গিয়ে প্রবল প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার সেনা। প্যারাট্রুপার নামিয়েও লাভ হয়নি। শনিবার ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কোয়ার থেকে ৩০ কিমি দূরে আটকে গিয়েছে তারা। ইতিমধ্যে বেলারুশে গিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পর্যন্ত ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিভের দাবি, রাশিয়ার শর্ত মানা সম্ভব নয়। কাজেই, দীর্ঘ হচ্ছে লড়াই। এদিনই আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদামির জেলেনস্কিকে কিভ ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। বলেছেন, “পালিয়ে যেতে চাই না। আমরা ওদের রুখে দিয়েছি। এখন যুদ্ধের জন্য গোলা-বারুদ চাই।” যদিও এই পরিস্থিতির জন্য ইউক্রেনের অনড় অবস্থানকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন। এদিন বিকেলে আরও একবার আলোচনায় বসার জন্য ইউক্রেন সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় সন্ধ্যায় আরও ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ডাক দিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনে সব দিক থেকে আক্রমণ আরও বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রুশ সেনাকে। একটি বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। শুক্রবার আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার পরই হামলা সাময়িক বন্ধ রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু ইউক্রেন রাজি না হওয়ায় শনিবার বিকেলে ফের অভিযান শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এদিন বেলা গড়াতেই কিভের অন্যতম প্রবেশপথ ভাসিলকিভ দিয়ে তারা এগিয়ে আসে। শহরের বহুতলে আছড়ে পড়ে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। তারপরই কিভের রাস্তায় শুরু হয় দু’পক্ষের মুখোমুখি লড়াই। রুশ সেনার এগিয়ে আসার খবর পেয়েই ১৮ ঊর্ধ্ব সবাইকে দেশরক্ষায় অস্ত্র হাতে নেমে পড়ার আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তাতে সাড়া দিয়েছেন প্রাক্তন সেনাকর্মী, সংসদ সদস্য থেকে সাধারণ নাগরিক। অস্ত্র কাঁধে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন রাশিয়ার সেনার সামনে। রাজপথে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। রাস্তা থেকে তোলা সেলফি ভিডিওয় দেখা গিয়েছে, তাঁর পরনে সেনার জলপাই পোশাক। কিছুটা ক্লান্ত মুখ। কিন্তু দেশরক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গলা, “আমি এখানেই রয়েছি। আমরা আত্মসমর্পণ করব না। প্রতিরোধ গড়ে তুলব। অস্ত্রই আমাদের সবচেয়ে বড় সত্য।” রীতিমতো ‘আর্ট অব ওয়ার’ মেনে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন সেনা। পিছু হটার মুখে তারা সব রাস্তা, সেতু, রসদ ধ্বংস করে দিচ্ছে। ফলে খানিক থমকেছে রাশিয়ার আগ্রাসন। তবে দুই দেশকে আলোচনায় বসাতে উদ্যোগী হয়েছেন তুরস্ক ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। শনিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় সেই উদ্যোগকেই স্বাগত জানান জেলেনস্কি। পাশাপাশি ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিন শিশু সহ ১৯৮ জন সাধারণ নাগরিক রুশ সেনার হামলায় মারা গিয়েছেন। আহত ১,১১৫ জন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন শিশু। নিহত রুশ সেনার দেহ কিভের শহরতলি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেড ক্রসকে আবেদন করেছে ইউক্রেন। তাদের দাবি, সাড়ে তিন হাজার রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। বন্দি অন্তত ২০০। অন্যদিকে, ক্রেমলিনের সরকারি ওয়েবসাইট এদিন সাইবার হামলার শিকার হয়। পরিস্থিতির চাপে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলিতে ‘আক্রমণ’, ‘যুদ্ধ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করার উপর জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।