ইউক্রেনের আকাশে বারুদের গন্ধ। মুহূর্মুহ গোলাবর্ষণের শব্দ। ঘনঘন বেজে উঠছে সাইরেন। আর এই পরিস্থিতিতেই যুদ্ধকবলিত দেশে আটকে পড়েছেন বাংলার একাধিক পড়ুয়া। ছেলেমেয়েদের চিন্তায় সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে পশ্চিমবঙ্গে থাকা বাবা-মায়ের ঘুম উড়েছে। যোগাযোগের ভরসা একমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ কল।
তাও বেশিরভাগ সময়ই নেটওয়ার্কের সমস্যার জেরে সেটুকুও সম্ভব হচ্ছে না। যুদ্ধের সাইরেন বেজে উঠলেই ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। সেখানে ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে। সরকারের কাছে উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েদের কাতর আর্জি, দ্রুত ছেলেমেয়েদের বাড়ি ফেরানোর বন্দোবস্ত করা হোক।
অসহায় অবস্থা বহরমপুরের জয়রামপুরের মণ্ডলপাড়ার আনসারি পরিবারের। বাড়ির ছেলে তোজাম্মেল হক আনসারি ২০১৮ সালে এমবিবিএস ইউক্রেনের রাজধানীতে মেডিক্যাল পড়তে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ভোররাতে শেষবার বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে আটকা পড়ে গিয়েছেন এই তরুণ।
আতঙ্কের মধ্যেই রাত কাটে তাঁর। সকাল হতে যদিও সে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে আসতে পেরেছে বলে খবর। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগের একমাত্র পথ হোয়াটসঅ্যাপ কল। কিন্তু, অধিকাংশ সময় নেটওয়ার্কের সমস্যার জেরে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘন ঘন বোমাবাজির মধ্যে সন্তানরা সুস্থ থাকুক সেটুকুই প্রার্থনা পরিবারের।
শেষবার তোজাম্মেল তাঁর এক দাদাকে ফোনে জানিয়েছিলেন, শহরে লাগাতার সাইরেন বাজছে। রাত তিনটে থেকে সকাল সাতটার মধ্যে হামলা হতে পারে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে ওই সময়টা বেসমেন্টেই কাটাতে হচ্ছে। তাঁর দাদা মইনুল ইসলাম বলেন, ”করোনার জন্য গতবছর জানুয়ারি মাসে বাড়ি ফিরেছিল তোজাম্মেল।
কিন্তু, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই গত ডিসেম্বরে ফের ইউক্রেনে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। এতদিন অনলাইনের ক্লাস করত। ওখানে ফিরে গিয়েই যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়ে গেল।” মা হাসিনা বিবি বলেন, ”আমার ছেলে সুস্থ ভাবে দেশে ফিরে আসুক এটুকুই চাই।”
অন্যদিকে ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘির অপর এক ছাত্র মহম্মদ এনায়েতুল্লাহ। ইউক্রেনের লুহানস এলাকায় আটকে রয়েছেন তিনি। সাগরদীঘি ব্লকের গোবর্ধনডাঙ্গা এলাকার এনায়েতুল্লাহ ডাক্তারি পড়তে ২০১৭ সালে ইউক্রেনে যান। মেডিকেলের পঞ্চম বর্ষের ছাত্রের জন্য চিন্তায় ঘুম উড়েছে পরিবারের।
যুদ্ধকবলিত ইউক্রেনে আটকে পড়েছেন নদিয়ার চাপড়া এলাকার বাসিন্দা আফ্রিদি মণ্ডল। তিন বছর আগে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন আফ্রিদি। ইউক্রেনের খারকিভে কার্জিন মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি তিনি পড়ছেন তিনি। যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় দু’চোখের পাতা এক করতে পারছে না তাঁর পরিবার। যুদ্ধ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নিজের অপর সহপাঠীদের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নেন আফ্রিদি।