বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই স্বাস্থ্য, শিক্ষার পাশাপাশি শিল্পের দিকেও বাড়তি নজর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই যে পাখির চোখ, তাঁর সরকারের আগের দু’দফায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। বুধবার শিল্পমহলের সঙ্গে রাজ্যের শিল্প পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, এবার যেমন বড় শিল্পের দিকে রাজ্য নজর দেবে, তেমনই আগামী শিল্প সম্মেলনে দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেবে সরকার। গোটা দেশের সামনে রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তির প্রচারেও বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অফিসারমহলের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, প্রত্যেককে নির্দিষ্ট কাজ করতে হবে নিখুঁত ভাবে। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করবে না সরকার। তা নিশ্চিত করতে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকেও পৃথক দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গতকাল শিল্পমহলের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘বাংলা আগামী দিনে বিনিয়োগের গন্তব্য। সামাজিক সব কাজ আমরা করেছি। এ বার শিল্প, কর্মসংস্থান, পরিকাঠামোই সরকারের লক্ষ্য। আর্থিক পরিস্থিতিও উন্নতি হচ্ছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা-পরিকাঠামোতে অনেক কাজ হয়েছে। দেখতে চাই, এ রাজ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হবে।’ রাজ্যের দাবি, গত ১০ বছরে ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে শিল্পক্ষেত্রে। তার মধ্যে ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা মাঝারি এবং ক্ষুদ্রশিল্পে ব্যাঙ্কঋণ হয়েছে। তাই এখন বড় প্রকল্পকে সামনে রাখা হয়েছে। তাজপুরের বন্দর নিয়ে দরপত্র ডাকা হয়েছে, বিনিয়োগ হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। ডেউচা-পাঁচামিতে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে জঙ্গলমহলেও। উৎপাদন, ইস্পাত, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেরও সেই প্রস্তাব আসছে। এটি ডানকুনি-অমৃৎসর ফ্রেট করিডরের আওতায় আসবে।
রাজ্যের পরিকল্পনা, ডানকুনি-রঘুনাথপুর, ডানকুনি-কল্যানী এবং ডানকুনি-হলদিয়া শিল্প করিডর তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে অশোকনগরে তেল, গ্যাস পাইপলাইন, দিঘায় কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন, এমএসএমই, চর্মশিল্প, ফুটপার্ক, সাইকেল তৈরির কারখানা, স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য বিদ্যুৎচালিত তাঁত প্রকল্প এবং ইথানল, ডেটা সেন্টার নীতি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী শিল্প সম্মেলনে দেশীয় শিল্পকে তুলে ধরতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমরা এবার দেশীয় শিল্পকে অগ্রাধিকার দেব। বড়, মাঝারি, ছোট ক্ষেত্রে এই নীতি অনুসরণ করা হবে। বিদেশী যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও স্বাগত। ফলে সব মিলিয়ে একটা ইতিবাচক কাজ হবে।’ এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং অফিসারদের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। তাঁর পরামর্শ, শিল্পস্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনগুলির সর্বত্র একই ধরনের করব্যবস্থা চালু করা হোক। বিল্ডিং প্ল্যান, জমি-ট্রেড লাইসেন্স, দমকল, পরিবেশ-সহ সব ছাড়পত্র সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে।