এবার দেশের রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে বিরোধী শিবিরের মুখ করা হতে পারে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকে। এই মর্মে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। তা নয়া মাত্রা পেয়েছে তাঁর সঙ্গে ভোট কুশলী প্রশান্ত কুমারের দীর্ঘ বৈঠকের পর। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা শুরু হবে ১০ মার্চ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পর। তবে প্রার্থী নিয়ে ঘরোয়া আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিরোধীদের একাংশ চাইছেন নীতীশকে রাষ্ট্রপতি পদে সম্মিলিত বিরোধী প্রার্থী করা হোক। আগামী জুলাইয়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের মেয়াদ শেষ হবে। তাঁকে দ্বিতীয়বার ওই পদে রেখে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে থেকে নির্বাচনে লড়াই করতে হবে। সেই সম্ভাবনা নেই। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে উপ রাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডু হবেন বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। ইতিমধ্যে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার বাসনা নিয়ে অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সমর্থন চেয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর ফর্মুলা হল, প্রথমে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে লড়বেন। জিতে গেলে মোদী সরকার চাপে পরে যাবে। আর হেরে গেলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী ঐক্য মজবুত করে নেওয়া যাবে।
কিন্তু বিরোধীদের একাংশ চাইছে, ওই একই ফর্মুলায় বরং প্রার্থী করা হোক নীতিশকে। তিনি দীর্ঘদিন বিজেপির সঙ্গে আছেন বটে। কিন্তু হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে বরাবর দূরত্ব রক্ষা করে চলেছেন। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে একের পর এক মুসলিম বিরোধী কর্মসূচী নেওয়া হলেও বিহারে সরকারের শরিক হয়েও নীতিশকে দিয়ে তা করাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। আর বছর পঁচিশ মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি অটুট। দুর্নীতির কোনও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে নেই। তাঁকে প্রার্থী করে জেডিইউ-কে এনডিএ থেকে বের করে আনা যাবে। মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা তথা মন্ত্রী নবাব মালিক তো প্রকাশ্যেই বলেছেন, সবচেয়ে ভাল হবে নীতিশ কুমার রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হলে।
উল্লেখ্য, নীতীশ বিজেপির সঙ্গী হলেও তাঁর সঙ্গে সোনিয়া ও রাহুলের সু-সম্পর্ক আছে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে তিনি প্রধামন্ত্রীর পদপ্রার্থী হতে চেয়ে রাহুলের সমর্থন চেয়েছিলেন। দুজনের আলোচনা এগোয়নি তখন লালুপ্রসাদের আপত্তিতে। তবে আশ্চর্যের হল, এখন নীতিশের ব্যাপারে সবচেয়ে আগ্রহী ব্যক্তিটির নাম লালুপ্রসাদ যাদব। লালু চাইছেন, নীতিশ কুমার ও তাঁর দল জনতা দল ইউনাইটেডকে বিজেপির এনডিএ থেকে বের করে আনতে। কারণ নীতিশকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠিয়ে দিতে পারলে শাসক জোটের বোঝাপড়া ভেঙে যাবে। তখন লালুপ্রসাদের দল নীতিশের পার্টিকে সমর্থন দিয়ে সরকার বাঁচিয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, এমনিতেই বিহারে বিজেপির সঙ্গে নীতিশের ইদানীং বনিবনা হচ্ছে না। বিহার বিজেপির একাংশ চাইছে নীতিশ এবার মুখ্যমন্ত্রীর গদি ছাড়ুন। এই পরিস্থিতিতে লালু প্রসাদ একপ্রকার খোলা চিঠি দিয়ে রেখেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে এলে রাষ্ট্রীয় জনতা দল তাঁকে সমর্থন দেবে। লালু প্রসাদ ইদানীং এই ব্যাপারে জোর চেষ্টা চালান নিজের দলের কথা ভেবেও। তিনি জানেন, জেল থেকে তাঁর জামিন পেতে সময় লাগবে। তাছাড়া তাঁর শরীর স্বাস্থ্য ভালো নয়। নীতিশকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানো গেলে বিহারের মাটিতে আরজেডির সুবিধা হবে। নীতিশ নিজেও বলে রেখেছেন, মুখ্যমন্ত্রী পদে আর লড়াই করবেন না।