এবার বিধানসভায় আসন্ন রাজ্য বাজেট পাঠ করতে পারেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। রাজ্যের অর্থ দফতর রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। আর এই দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী পদে রয়েছেন চন্দ্রিমা। সূত্র অনুযায়ী, বাজেট পড়তে পারেন তিনিই। এবার বিধানসভায় ইতিমধ্যে প্রশাসনের অন্দরে এব্যাপারে একদফা আলোচনা হয়েছে। আর যদি সেটা বাস্তবায়িত হয়, সেক্ষেত্রে রাজ্য বিধানসভার ইতিহাসে প্রথম ঘটনা হবে, যেখানে কোনও মহিলা মন্ত্রী আগামী অর্থ বর্ষের হিসেব-নিকেশ পেশ করবেন। সূত্রের খবর, আগামী ৮ই মার্চ বিধানসভার অধিবেশন বসছে। ১১ই মার্চ পেশ হতে পারে রাজ্য বাজেট।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সরকারে দীর্ঘদিন অর্থ দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন ডঃ অমিত মিত্র। শারীরিক অসুস্থতার কারণে একুশের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। কিন্তু অমিত মিত্রের পাণ্ডিত্য, জ্ঞান, অর্থনৈতিক বিষয়ে খুঁটিনাটি সব খোঁজ-খবর রাখার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে রয়েছেন তিনি। অর্থ দপ্তর মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকলেও, রাষ্ট্রমন্ত্রী পদে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এর আগে বামফ্রন্ট আমল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে বিভিন্ন সময়ে রাজ্য বাজেট পেশ করেছেন অশোক মিত্র, অসীম দাশগুপ্ত, অমিত মিত্ররা। আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে তৃণমূল সরকারের আমলে একটি বছর অমিত মিত্র বাজেট পড়তে পারেননি। সেই সময় বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পড়েন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের ভেতরের খবর, এবার রাজ্য বাজেট বিধানসভায় পাঠ করার গুরুদায়িত্ব পড়তে চলেছে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে। যার প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিধানসভার বর্ষীয়ান বিধায়করা বলছেন, বাজেট পড়বার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা নেই রাষ্ট্রমন্ত্রীর।
পাশাপাশি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের হাতে রাজ্য সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দফতর রয়েছে। যার মধ্যে পুরদফতর সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। বিশ্লেষকদের মধ্যে এখনই কৌতূহল জন্মেছে যে, বিধানসভায় প্রথমবার একজন নারীর বক্তব্যে কীভাবে বাজেট ভাষণ উঠে আসে। বিশেষ করে কেন্দ্রের সরকারে অর্থ মন্ত্রী রয়েছেন নির্মলা সীতারামন। আর সেখানেই চন্দ্রিমার কাছে বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। বিভিন্ন উদ্ধৃতি উল্লেখ করে, জনমুখী প্রকল্পের ঘোষণা এবং বাজেট বরাদ্দের মধ্যে দিয়ে ভাষণকে আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। এদিকে আগামী ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস রয়েছে। যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের নির্দেশ শুক্রবার দলের বৈঠকে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহিলা শাখার সভানেত্রী কাকলি ঘোষ দস্তিদার বছেন, ৮ই মার্চ কলকাতায় একটি পদযাত্রার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ওই দিন রাজ্যজুড়ে জেলায় জেলায় একাধিক কর্মসূচী আয়োজিত হবে।
উল্লেখ্য, নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারীকে শিক্ষায় ও রোজগারে স্বাবলম্বী করে তোলা, বিভিন্ন নির্বাচনে সর্বাধিক মহিলা প্রার্থী দেওয়া, এই সামগ্রিক পরিমণ্ডলে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মেয়েদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে একাধিক জনমুখী প্রকল্প নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এছাড়াও লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা সাংসদ সংখ্যা ৩৫ শতাংশের বেশি। কলকাতা, বিধাননগর চন্দননগর, আসানসোল, শিলিগুড়ি পুরসভার নির্বাচনে ৪৮ শতাংশের বেশি মহিলা প্রার্থী ছিল তৃণমূলের। নির্বাচন জয়লাভের পর মেয়র এবং চেয়রম্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও বসেছেন একাধিক মহিলা। যা নিঃসন্দেহে তৈরি করেছে দৃষ্টান্ত।