গত সোমবারই আশুতোষ কলেজের সামনে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। আর তারপর থেকেই উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছিল। তবে গেরুয়া শিবির হিংসার পথ নিতেই শুক্রবার রাতে তা কার্যত তুঙ্গে উঠল। হাতাহাতি, মারধর, শাসক দলের কার্যালয় ভাঙচুর, প্রার্থীকে হেনস্থা সবই ঘটে গেল এক লহমায়। আর সেই ঘটনার জেরে শনিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত কাঁথি।
অধিকারী গড় হিসাবে পরিচিত এই শহরেই শুক্রবার রাতে ঘটে যায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে ও শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরিকে মারধর করা ও তৃণমূলের কার্যালয়ে ভাঙচুর করার। আর গোটা ঘটনাটাই নাকি ঘটেছে শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে। সেই ঘটনার জেরে শনিবার সকাল থেকেই শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছে তৃণমূল।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে কাঁথি শহরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী নির্মাল্য দাসের সমর্থনে প্রচারে বেড়িয়ে সুপার মার্কেট লাগোয়া একটি মন্দিরে শুভেন্দুর পুজো দিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই মন্দিরে জুতো পরে প্রবেশ করেছিলেন শুভেন্দু ও তাঁর সঙ্গে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। সেই সময়ে মন্দিরে উপস্থিত থাকা মহিলারা সেই ঘটনার প্রতিবাদ করলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ওই মহিলাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মন্দিরের পাশে থাকা তৃণমূলকর্মীরা সেই ঘটনার প্রতিবাদ করলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাঁদের মারধর শুরু করেন।
খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে আসেন ওই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি। তখনই তাঁকে শুভেন্দুর নিরাপত্তারক্ষীরা আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। শুভেন্দুর সঙ্গে সেই সময় সুপ্রকাশের হাতাহাতিও হয়। সেই ফুটেজ নানা সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাতেই শুভেন্দু অধিকারীকে গ্রেফতার করার দাবি নিয়ে কাঁথি থানায় বিক্ষোভ দেখান সুপ্রকাশ গিরি সহ তৃণমূলের কর্মীরা। যদিও বর্তমানে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুপ্রকাশ। সেখানে আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীদেরও চিকিৎসা করানো হচ্ছে। ঘটনায় তদন্তের আবেদন জানিয়ে কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি।
তিনি বলেন, ‘প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি যখন প্রচার করছিল, সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী ওই দিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তৃণমূলের কর্মীরা তখন স্লোগান দিচ্ছিল। শুভেন্দু নিজেই সুপ্রকাশকে দেখিয়ে দেন। তারপর তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে মারধর করে সুপ্রকাশকে। তাঁকে বন্দুক দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সে রাস্তার ওপর পড়ে গেলে তাঁর গলা চেপে ধরা হয়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরও কয়েকজন তৃণমূল কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’ ঘটনায় আহত সুপ্রকাশ গিরি জানিয়েছেন, ‘অশান্তি সৃষ্টি করতে গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসেছেন শুভেন্দু৷ কাঁথি পুরসভার যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই অশান্তি করছেন৷ সিআরপিএফ গন্ডগোল করছে৷’