পর্যটনপ্রিয় মানুষদের বরাবরের পছন্দের তালিকায় থাকে উত্তরবঙ্গ। এবার সেই উত্তরবঙ্গের ইউ এস পি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের উপর ভর করেই পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে এগোচ্ছে রাজ্য সরকার। উত্তর মানেই পাহাড় আর জঙ্গল নয়, তার বাইরেও রয়েছে অনেক কিছু। পাহাড়-জঙ্গলের গন্ডিতে পর্যটনকে আর আটকে রাখতে চাইছে না রাজ্য সরকার। এবার উত্তরবঙ্গের সাংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্যকেই উপজীব্য করে পর্যটন শিল্পকে উন্নীত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
উল্লেখ্য, উত্তরের অনন্য বৈচিত্রকে তুলে ধরতে জোর রাজ্যের, করোনা পরবর্তী পর্যায়ে পর্যটন শিল্পে গতি আনতে বেঙ্গল হিমালয়ান কালচারাল ফেস্টিভ্যাল এবং নর্থ বেঙ্গল বার্ড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হবে। পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই গজলডোবায় বার্ড ফেস্টিভ্যাল এবং ক্যালিম্পং-এ হিমালয়ান কালচার ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করবে রাজ্য সরকার। যা পর্যটন শিল্পের গতিতে বাড়তি অনুঘটকের কাজ করবে।
এপ্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের বিজনেস মিটে রাজ্যের পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী জানান, “কোভিডের জন্য প্রায় তিন বছর পর্যটন শিল্প বড় ধাক্কা খেয়েছে। ফলে বর্তমান সময়টা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং। আমরা পর্যটনের উপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটা উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিকাঠামোর উন্নয়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে।” নন্দিনী দেবীর কথায়, “মালদা, কোচবিহার এবং দুই দিনাজপুরে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে তুলে ধরতে হবে সেখানকার সংস্কৃতি। পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে। সেই কাজ শুরুও করে দিয়েছে রাজ্য।”
পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে হোমস্টেগুলো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পর্যটকরা ছুটি কাটাতে এসে হোমস্টে-কেই বেছে নিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের রোজগার বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোমস্টের ক্ষেত্রে ভর্তুকিও দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তাই অন্য জায়গার পর্যটন শিল্পের বিকাশে হোমস্টের দিকেই ঝুকছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণবঙ্গে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো জেলায় হোমস্টে তৈরি করতে আগ্রহী হয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, রাজ বসু এবং সম্রাট সান্যালকে বিশেষ দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। ইতিমধ্যেই তারা গ্রামীণ পর্যটনে স্থানীয়দের উৎসাহ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। রাজ বলেন, “পর্যটনের মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।”
এবিষয়ে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, “সরকার অনেক পরিবর্তন আনতে চাইছে। আমাদের সংগঠনের তরফ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।” সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে সিআইআইয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা জানান, “পর্যটনকে বাদ দিয়ে উত্তরবঙ্গের শিল্প ভাবা যায় না। তাই রাজ্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আগামীদিনে নতুন পথ দেখাবে।”