শেষ হল লড়াই। চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। শিল্ডের সেমিফাইনালে কোরিয়া একাদশের বিরুদ্ধে তাঁর করা দর্শনীয় গোল এখনও অনেকের স্মৃতিতে তরতাজা। সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে গোল করার পরে বার ধরে ঝুলে পড়ার ছবির কথা এখনও উজ্জ্বল ফুটবলপ্রেমীদের মনে। কলকাতা ময়দানে তাঁর মতো শিল্পী ফুটবলার খুবই কম এসেছেন। বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সুরজিৎবাবু। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। শেষের কয়েকদিন তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার দৌড় থেমে গেল উইঙ্গারের।
বিগত ২২শে জানুয়ারি চলে গিয়েছেন আরেক দিকপাল ফুটবলার সুভাষ ভৌমিক। সেই শোকের ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি কলকাতার ফুটবলমহল। তার মধ্যেই খবর সুভাষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একসময়ের সতীর্থ প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত প্রয়াত হলেন। অতীতে বহু ডিফেন্ডারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। মারডেকা টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে মালয়েশিয়ার ডিফেন্স নিয়ে ছেলেখেলা করেছিলেন। এক ডিফেন্ডারের বুটের স্টাডের আঘাতে তাঁর কান ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল। গোল করার পরে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন না। কিন্তু সন্তোষ ট্রফিতে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে ফাইনালে গোল করার পরে উচ্ছ্বসিত সুরজিৎ বার ধরে ঝুলে পড়েছিলেন। সেই ছবি ছাপানো হয়েছিল সংবাদপত্রে। সেই সময়ে প্রবল চর্চা হয়েছিল সুরজিৎ সেনগুপ্তর সেই আনন্দ উদযাপন নিয়ে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে প্রথম বড় ক্লাব হিসেবে মোহনবাগানে সই করেছিলেন। এক বছর সবুজ-মেরুন জার্সিতে খেলার পর পরের বছরই ইস্টবেঙ্গলে চলে যান তিনি। ১৯৭৮-৭৯ সালে ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন। সুরজিৎ সেনগুপ্তকে নিয়ে ময়দানে ছড়িয়ে রয়েছে কত গল্প, তার ইয়ত্তা নেই। গুরু পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র সুরজিতের খেলা দেখে এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তাঁর স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই ছিলেন শিল্পী উইঙ্গার।
উল্লেখ্য, প্রথম দিকে তাঁর বাঁ পা খুব একটা সচল ছিল না। কিন্তু তাঁর কোচ ‘ভোলাদা’র প্রশিক্ষণে কালক্রমে তাঁর বাঁ পা-ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। লেফট উইঙ্গার হিসেবে ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে। দলবদলের সময়ে তাঁকে নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত দু’প্রধানে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে আটকে রাখা একেবারেই পছন্দ করতেন না তিনি। একবারের দলবদলের সময়ে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। ফুটবলজীবন শেষ হওয়ার পরে তাঁর অনেক সতীর্থই কোচ হিসেবে পা রেখেছিলেন বিভিন্ন ক্লাবে। তবে প্রশিক্ষক হননি সুরজিৎ।