একেই কমছে না সদ্যসমাপ্ত পুরভোটে হারের যন্ত্রণা। তার মধ্যেই ফের দুশ্চিন্তার নুন এসে পড়ছে গেরুয়াশিবিরের দগদগে ক্ষতে। বুধবার বর্ধমানের বড়নীলপুর মোড় থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় পদযাত্রা শুরুর কথা ছিল। দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ এসে পৌঁছলেন সাড়ে ১১টার সময়। বড়নীলপুর মোড়ে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ৩৩জন প্রার্থী দাঁড়িয়ে আছেন। দিলীপবাবুর গাড়ি ঢুকতেই তাঁরা এগিয়ে এলেন। কিন্তু দলের প্রার্থী আর কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কি আর সভার আয়োজন করা যায়? তাই কয়েকজন নেতা কর্মী খোঁজার জন্য পাশের চা দোকানগুলির দিকে তাকালেন। কয়েকজনকে হাঁক দিয়ে ডেকে পদযাত্রায় শামিল করলেন। সবমিলিয়ে প্রার্থী সহ মেরেকেটে ১০০জন কর্মী-সমর্থককে নিয়ে কার্জনগেটের উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করলেন। রাস্তার দু’পাশে লোকজন নেই। বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাস্তার দু’পাশ থেকে দলের নেতাদের মাথায় ফুলের পাপড়ি এসে পড়ত। ঘনঘন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানে এলাকা যেন কেঁপে উঠত। বিজেপি নেতাদের গলায় এখন সেই জোর নেই। মাঝেমধ্যে স্লোগান উঠল ঠিকই, কিন্তু সেই জোর নেই। ফুলের পাপড়িও উড়ে এল না। বিজেপি নেতারা পদযাত্রা করলেও এলাকার বাসিন্দারা তা জানতেও পারলেন না।
প্রসঙ্গত, এদিন সাংগঠনিক দুর্বলতা টের পেয়ে কার্জনগেটের পথসভায় দিলীপবাবু বললেন, “করোনা পরিস্থিতির জন্য বেশি লোক ডাকিনি। ৩৩জন প্রার্থীকে ডেকেছিলাম। সঙ্গে জেলার নেতারা ছিলেন।” যদিও দলের অনেকেই বলছেন, দিলীপবাবু পুর নির্বাচনের আগে পদযাত্রা করে কর্মী সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফল উল্টো হয়েছে। পদযাত্রার এই ছবি দেখে কর্মী সমর্থকদের মনোবলে ফাটল ধরবে। এমনিতেই চার পুর নির্বাচনে জোর ধাক্কা খাওয়ার পর কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বেড়েছে। অনেকে প্রচারে বেরতেই চাইছেন না। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের কোনও কর্মসূচীতে লোক জোগাড় করতে তেমন কষ্ট করতে হত না। এখন বারবার ডেকেও কর্মীদের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এদিন কার্জন গেটের সভা থেকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই দিলীপবাবু তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন। তিনি বলেন, “পুর নির্বাচনে গণতন্ত্র ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। যারা প্রচারে বের হচ্ছে তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল চাইছে চীনের মতো বাংলাতেও একটাই দল থাকুক।” তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্ত বলেন, “পুরনিগমগুলির ফলাফল দেখে বিজেপি নেতাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। সারা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন ওই চার পুরনিগমে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। দিলীপবাবুর ওসব কথার কোনও যুক্তি নেই।” বিজেপি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, শহরের ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তাদের ৩৩জন প্রার্থী রয়েছেন। একটি ওয়ার্ডে নাম ঘোষণা হওয়ার পরেও ওই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা করেননি। অন্য আরএকটি ওয়ার্ডের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা করার পরেও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে এসেছেন। এক নেতা বলেন, দিলীপবাবুর পদযাত্রার পর প্রচারে গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য নেতার কর্মসূচিতেই লোক হল না। তাহলে জেলা নেতারা জমায়েত করবেন কীভাবে?” প্রকৃতপক্ষে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব না মেটার জন্য সংগঠন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই সময়েও নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন নেতাদের একাংশও। যা প্রবল চাপে ফেলছে পদ্মশিবিরকে।
