একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব দলেরই অন্য অংশ। এরই মধ্যে কলকাতা পুরভোটের পর এবার রাজ্যের চার পুরসভা বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়িতেও ধরাশায়ী হতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। আর তা নিয়েই ফেত নতুন করে দলের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে একে অন্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পালা। নিচুতলায় দলের সংগঠনের হাল যে তলানিতে।
মাঠে নেমে লড়াই দেওয়ার মতো দম গেরুয়া শিবিরের নেই। সেটাই যে পুরভোটের ফলে প্রমাণিত হয়ে গেল, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের বড় অংশই। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁর বক্তব্য, ‘সংগঠনের দুর্বলতা আছে, এটা স্বীকার করতে হবে। ছোট ছোট ভোটে (পুরসভা-পঞ্চায়েত) লড়াইয়ের যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি আমরা।’ আসানসোল-শিলিগুড়ির মতো জায়গায় এত খারাপ ফল কেন? জবাবে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘এখানে আমরা ভাল ফলের আশা করেছিলাম। কেন সেখানে এতটা খারাপ হল সেটা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।’
অন্যদিকে, দলের বিক্ষুব্ধ নেতা রীতেশ তিওয়ারি থেকে শুরু করে জয়প্রকাশ মজুমদাররা এই ফলাফলের জন্য রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ব্যর্থতাকেই সরাসরি দায়ী করেছেন। জয়প্রকাশ মজুমদারের তোপ, ‘অসহায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, ভাচুর্য়াল চক্রবর্তী নাকি টুইটার মালব্য, কে পদত্যাগ করবেন এই ফলাফলের দায় নিয়ে।’ এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেছেন যে, বাংলার বিজেপি এখন হয় কোর্টে নয়তো রাজভবনে। এই নিয়েই বিজেপি লড়তে চাইছে। সঙ্গে মানুষ নেই, সংগঠন নেই, কর্মী নেই। শুধু টাকা খরচ করলেই ভোট হয় না।
আবার রীতেশ তিওয়ারির বক্তব্য, ‘এই ফলের জন্য দিলীপ ঘোষ-কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ কেন্দ্রীয় নেতারা বা দিল্লি নয়। বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও সেরকম ভূমিকা ছিল না। ভার্চুয়াল চক্রবর্তী ও তার কিছু অনুচর দায়ী এই ফলের জন্য। কারণ পুরভোট পরিচালনা ও সমস্ত কর্মকাণ্ড টিম অমিতাভ চক্রবর্তীই করেছিল।’ এদিকে সব্যসাচী দত্তের উদাহরণ টেনে ফের কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপ দেগে টুইটে তথাগত রায় লিখেছেন, ‘সব্যসাচী দত্ত বলেছেন, ‘কে চেয়ারে বসবেন তা খুব বড় নয়। আমি জানি আসল মেয়র’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’। এই সব লোকেদের নিয়ে কেডিএসএ গ্যাং ধেই ধেই করে নেচেছিল।’ এরপরই ছাপার অযোগ্য ভাষায় আক্রমণ শানান তথাগত।