চরমে পৌঁছোল পদ্মশিবিরের আভ্যন্তরীণ কোন্দল। এবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘকে অমান্য করার অভিযোগ উঠল দলের বঙ্গ শাখার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে বর্তমানে কেশব ভবনের সঙ্গে ৬, মুরলীধর সেন লেনের চাপানউতোর তুঙ্গে পৌঁছল। গত ২০শে সেপ্টেম্বর দলের নয়া রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু তারপর থেকে জেলা, রাজ্য এমনকী পরিষদীয় পরিসরেও অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত গেরুয়া শিবির। সামগ্রিক এই চিত্রে জনমানসে কালিমালিপ্ত হচ্ছে সঙ্ঘ ও বিজেপির ভাবমূর্তি। কারণ, আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি। উপর্যুপরি, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে রয়েছেন সঙ্ঘের প্রচারক অমিতাভ চক্রবর্তী। যাঁকে ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক। এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলায় দিলীপ ঘোষসহ বিজেপিতে কাজ করা একাধিক সঙ্ঘ নেতার মতামত নেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে এ রাজ্যের শীর্ষ সঙ্ঘ অধিকারীরা সুকান্ত-অমিতাভকে বেশ কিছু উপদেশও দেন। কিন্তু কেশব ভবন সূত্রের দাবি, আরএসএসের সেই পরামর্শ কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে বঙ্গ পার্টির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। গোটা বিষয়ে সঙ্ঘের এক অধিকারী বলেন, “আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। রাজ্য বিজেপি তা গ্রহণ করেনি। এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতার টিকি দিল্লির বি এল সন্তোষের কাছে বাঁধা রয়েছে বলে উনি কাউকে পাত্তা দিচ্ছেন না। মাঝে বলির পাঁঠা হচ্ছেন রাজ্য সভাপতি।”
পাশাপাশি, রাজ্য দলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আরএসএসকে যা বলার বলেছেন বলে রবিবার ঝাড়গ্রাম থেকে ফোনে স্বীকার করেছেন দিলীর ঘোষ। তাঁর কথায়, “আমি সভাপতি থাকাকালীন সঙ্ঘ নানা পরমার্শ দিত। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতাম। বর্তমানে হাতে গোনা দু’-তিনজন পার্টির দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁরা হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী কিংবা ইগোয় ভুগছেন। তাই ভুল হচ্ছে।” তবে এই পরিস্থিতি বেশি দিন চলবে না সাফ জানিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপঘতি দিলীপ ঘোষ। রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, “নিজের পদ এবং দায়িত্ব সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। ভুল মানুষ মাত্রই হয়। কিন্তু তা সংশোধনের ইচ্ছা থাকা উচিত। সবার উপরে নজর রাখা হচ্ছে। উপযুক্ত জায়গায় জবাবদিহি করতে হবে পার্টির দায়িত্বশীল পদাধিকারীদের। কাউকে রেয়াত করা হবে না। কথা না শুনলে কপালে দুঃখ রয়েছে। পার্টির সর্বোচ্চ স্তরে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ইনপুট জমা হচ্ছে। সঠিক সময়ে দল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।” বর্তমানে রাজ্য বিজেপিকে যেভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে, তা নিয়েও অসন্তোষ গোপন করেননি দিলীপবাবু। তাঁর কথায়, “পার্টির বিভিন্ন স্তরে কমিউনিকেশন গ্যাপ হচ্ছে। অনেক নেতা-কর্মী ভাবছেন তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে না, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।” এক্ষেত্রে রাজ্য নেতাদের জেলা সফর (প্রবাস) করার পরমার্শ দিয়েছেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। যদিও সুকান্ত-অমিতাভদের জমানায় নেতাদের প্রবাস কিংবা কর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যত উঠে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। বিগত কয়েক মাসে বিজেপির হতশ্রী দশা নিয়েও আক্ষেপ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, “জেলায় জেলায় কর্মী-সমর্থকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, পার্টি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এত কষ্ট করে গত সাত বছর ধরে সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছিলাম। কষ্ট তো হবেই।”