শনিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ছয় সিনিয়র নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে ২০ জনের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই বৈঠকের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল আগে ও পরের দু’টি বৈঠক। প্রথমটি দলের সভাপতি সুব্রত বক্সির ভবানীপুরের পার্টি অফিসে। উপস্থিত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরের বিশেষ বৈঠকটি মূল বৈঠকের পর কালীঘাটে নেত্রীর অফিসে। কেউ এই বৈঠক নিয়ে মুখ না খুললেও স্বয়ং নেত্রী দলের দুই প্রধান নেতৃত্বকে বলে দিলেন, ‘”একজোট হয়েই থাকতে হবে। মতভেদ হলে মিটিয়ে নিতে হবে।” মূল বৈঠকেও একই বার্তা তাঁর। ঠিক হয় দলের পরবর্তী কমিটি ও পদাধিকারীদের নাম চূড়ান্ত করবেন মমতা। পরে সেটি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শনিবার ঠিক এভাবেই সম্পূর্ণ হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য প্রতিষ্ঠা। নিরসন হল যাবতীয় কৌতূহলের। তবে পুরতালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি অথবা ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নিয়ে আলোড়নের বিষয়টি কতটা নিষ্পত্তি হল তা বলবে সময়। বৈঠকের পর ফিরহাদ হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, “এক ব্যক্তি এক পদ নীতি নিয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটিই চূড়ান্ত অবস্থান।”
পাশাপাশি, বৈঠকে নেতাদের আরও জানিয়ে দিলেন যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না। ভোটের কাজ করতে ভবিষ্যতে যদি কোনও এজেন্সিকে আনা হয়, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। সামনে ১০৮টি পুরসভার ভোট। আপাতত সব কাজ ফেলে নেতৃত্ব জেলায় জেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ুক। বৈঠকে তৃণমূল ভবন তৈরির দায়িত্ব অভিষেক ও ফিরহাদের উপর দেন মমতা। তার আগে একটি অস্থায়ী পার্টি অফিস করতেও নির্দেশ দেন। মূল বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। ২০ জনের নাম থাকলেও তিনি ১৬ জনের নাম বলেন। চারজনের নাম বলতে ভুলে যান। ফিরহাদ, অরূপদের নাম না থাকায় তীব্র জল্পনা শুরু হয়। পরে আবার ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের ডেকে ভুল শুধরে বাকি চারজনের নাম বলে দেন। তাঁরা হলেন যশবন্ত সিনহা, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস। পার্থবাবু মনে করিয়ে দেন ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাজ্যজুড়ে ১০৮টি পুরসভার ভোট। সেখানে একমাত্র দলের প্রতীক নিয়ে যে প্রার্থীরা দাঁড়িয়েছেন কর্মীরা যেন তাঁদেরই সমর্থন করেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২রা ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর যে অস্থায়ী কমিটি মমতা গড়ে দিয়েছিলেন, তারই বৈঠক হয় এদিন। সেদিন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সহ-সভাপতি পদে সুব্রত বক্সি ও যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষিত হয়। এদিন অবশ্য জাতীয় ওয়ার্কিং কমিটি ঘোষণার পর সমস্ত পদই ফাঁকাই হয়ে গেল। নেত্রী পরে পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করবেন। ওয়ার্কিং কমিটিতে নাম থাকল না যাঁদের তাঁদের মধ্যে সৌগত রায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন। এদিন কালীঘাটে নেত্রীর অফিসে পাঁচটার বৈঠকের আগেই ভবানীপুরে সুব্রত বক্সির অফিসে মিলিত হন বাকি পাঁচ নেতা। সেখানে সুব্রত বক্সি বুঝিয়ে দেন, নেত্রী যে বার্তা দেবেন, তাই মেনেই চলতে হবে। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দলের যাতে ভাল হয় সেই জন্যই এই আলোচনা। পার্থবাবু অবশ্য বলেন, “এটা বৈঠক নয়, ভোটের ওয়াররুম। আগে থাকতেই যাঁদের ডাকা হয়েছিল, তাঁরা এসেছিলেন।” এদিকে, এদিনের পুরভোট নিয়ে মমতা সন্তোষপ্রকাশ করেন। কোনও জায়গাতেই প্রাণহানি হয়নি। দলের নেতাদের তৃণমূল নেত্রী বলেন, “১০৮ পুরসভায় শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন করতে হবে। কোথাও কোনও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।”