একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব দলেরই অন্য অংশ। এরই মধ্যে পুরভোটের প্রার্থী বাছতে গিয়ে বেজায় চাপের মুখে পড়েছে তারা। রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার ভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ফুরোতে যখন আর কয়েক ঘণ্টা বাকি, তখনও বিজেপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটল না।
প্রসঙ্গত, ১০৮টি পুরসভার ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়া শেষ হবে আজ, বুধবার। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বেশ কিছু পুরসভা এবং কয়েকটি পুরসভার কিছু ওয়ার্ডে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। রাজ্য দলের দাবি, সোমবার সন্ধ্যাতেই ১০৮টি পুরসভার ২২৭২টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘোষণা করার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু সব জেলা বিজেপির কাছ থেকে প্রার্থী তালিকা পাওয়া যায়নি। যেমন উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে দিনহাটা পুরসভার ১৬টি আসনের একটিতেও বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। কোচবিহার পুরসভার ২০টি আসনের সব ক’টিতে প্রার্থী দিলেও এখনও পর্যন্ত তাঁরা কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। বিজেপির দার্জিলিঙের প্রার্থী তালিকা নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও বৈঠক চলেছে জিএনএলএফের সঙ্গে। তুফানগঞ্জ এবং হলদিবাড়ি পুরসভার একটি করে ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম গতকাল রাত পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি।
যে সব জায়গায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, সেখানে কোথাও কোথাও আবার বিজেপিকে ভোগাচ্ছে দলের একাংশের বিক্ষোভ। যেমন—খড়্গপুর এবং মুর্শিদাবাদ। খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে পুর-প্রার্থী করেছে বিজেপি। অথচ অভিযোগ, তাঁর প্রস্তাবিত আর কাউকেই প্রার্থী করা হয়নি। উল্টে খড়্গপুরে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় পাল্লা ভারী সাংসদ দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠদের। এই আবহে সোমবার রাতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দলের রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ভাঙচুর হয়। এ দিন সকালেও দলীয় কার্যালয়ে দফায় দফায় ভাঙচুর, বিক্ষোভ চলে। গোলবাজার ভান্ডারিচকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির নেতা-কর্মীরা। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বিজেপি নেত্রী বেবি কোলে।
অন্যদিকে, মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান এবং জঙ্গিপুর পুরসভার প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলের একাংশের ক্ষোভের জেরে আক্রমণের মুখে পড়তে হয় উত্তর মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষকে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার প্রার্থী তালিকা নিয়েও স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, জেলার পাঠানো তালিকার নামগুলি বাদ দিয়ে রাজ্য থেকে অন্য নাম দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভ আছে নদিয়াতেও। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগেই কৃষ্ণনগরে দলীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। নদিয়া উত্তরের জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মীদের অনেকে।