সংসদে বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কার্যত সব দায় ঝেড়ে ফেললেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দেশে বেকারত্বও নেই, মূল্যবৃদ্ধিও নেই। বেকারত্ব ৪৫ বছরের রেকর্ড স্পর্শ করেছে। ২০১৪ সালে যিনি বলেছিলেন, বছরে ২ কোটি চাকরি দেওয়া হবে, সেই প্রধানমন্ত্রী সোমবার জানিয়ে দিলেন কর্মসংস্থানের জন্য সরকারের উপর ভরসা করে থাকার দিন শেষ। সবকিছু সরকার করে দেবে এই ভাবনা আর চলবে না। আগে মনে করা হতো, সরকারই ভাগ্যবিধাতা, সেই জীবিকার সব দায়িত্ব নেবে। কিন্তু এই ভাবনা ভুল। আমরা চাই যুবসমাজ নিজেই ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্যোগ নিক। যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে মোদীর বার্তা, গত ৫ বছরে ৬০ হাজার স্টার্ট আপ হয়েছে। আরও হোক। তিনি মনে করেন, বেকারত্ব নিয়ে বিরোধীরা বিভ্রান্ত করছে। একইভাবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দেশবাসী হাহাকার করলেও প্রধানমন্ত্রী মনেই করেন না, মূল্যবৃদ্ধি আকাশ স্পর্শ করেছে। বরং তিনি সাফ জানালেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেই আছে। মোদীর মতে, মূল্যবৃদ্ধি যা ছিল সব নাকি অতীতেই। ইউপিএ সরকারের সময় নাকি অনেক বেশি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল।
পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর জবাবি ভাষণে সোমবার প্রধানমন্ত্রী উল্টে ব্যর্থতার দায় চাপালেন বিরোধীদের উপর। তাঁর কথায়, করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য কারা দায়ী? বিরোধীরা। কেন? কারণ, দিল্লী, মুম্বই থেকে কংগ্রেস নাকি ট্রেনের টিকিট কেটে পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে রাজ্যে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই কারণে করোনা ছড়িয়েছে। কৃষকদের সমস্যা কে তৈরি করছে? বিরোধীরা। বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মোদীর প্রশ্ন, আপনারা সারাক্ষণ সব কিছুর জন্য মোদী, মোদী করেন কেন? মোদিকে ছাড়া আপনাদের এক মিনিটও চলে না? পাল্টা লোকসভায় বিরোধীরা তাঁকে প্রশ্ন করেছে, এখন প্রধানমন্ত্রী কে? তাহলে কাকে প্রশ্ন করব? জবাবী ভাষণে মোদী নিজের সরকারের তাবৎ ব্যর্থতাকে সাফল্য হিসেবেই তকমা দিলেন। অর্থনীতির মন্দায় সরকার বিপর্যস্ত। মোদী বললেন বিশ্বের সবথেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এখন ভারতের। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প নোটবাতিলের পর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মোদী বললেন, ক্ষুদ্র শিল্প নাকি বিপুল উন্নতি করেছে। এদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা হারিয়েছে করোনায়, সরকারি চাকরির দরজা প্রায় বন্ধ। যুবসমাজ ক্ষুব্ধ। কিন্তু সোমবার প্রধানমন্ত্রী বললেন, সরকার প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব নিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলে মোদী একদিকে যেমন কংগ্রেসকে আক্রমণ করে গেলেন, অন্যদিকে বিস্ময়করভাবে জওহরলাল নেহরুর শরাণপন্ন হলেন। গরিবের ঘরে রান্নার গ্যাস, মাথার উপর ছাদ, সকলের ঘরে শৌচালয়। গরিবের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্র্যান্সফার। মোদী দাবি করলেন, এই বৈপ্লবিক কাজগুলো সবই নাকি ২০১৪ সালের পর হয়েছে। আর তাতেই শুরু হয়েছে নিন্দার ঝড়।