উড়িষ্যার নবীন পট্টনায়েক এবং তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাওকে ক’দিন আগেও মনে করা হতো অবিজেপি শিবিরে নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে বিস্বস্ত বন্ধু। সংসদে এবং সংসদের বাইরে এতকাল বিজেপি এবং মোদী সরকারের পাশেই থেকেছে তাঁদের পার্টি বিজু জনতা দল এবং তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি। কিন্তু রাজ্যসভায় ওই দুই দলের সাংসদেরা যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছে তাতে অনেকেই বিস্মিত, চিন্তা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের।
মমতা বন্দ্যোাধ্যায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই সরব। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যগুলির অস্তিত্বই মানতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। আবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও তিনি একই সঙ্গে সরব। তাঁর বক্তব্য, বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেস মোটেই আন্তরিক নয়। কংগ্রেসের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাড়ছে বিজেপি। সরাসরি না বললেও ২০২৪ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল ভাবনা আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে অবিজেপি-কংগ্রেস জোট গড়ে তোলা। তবে বিজেপির মতো কংগ্রেসকে তিনি পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলার পক্ষপাতীও নন। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসকে আঞ্চলিক দলগুলির কথা মাথায় রেখে নেতৃত্বের প্রশ্নটি বিচার করতে হবে। বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসকেই ছাতা করতে হবে, মানেন না তিনি।
চন্দ্রশেখর এবং নবীনেরও কংগ্রেস প্রশ্নে একই অবস্থান। অভিন্ন অবস্থান সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদবের। বিহারে লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল বিজেপি বিরোধিতায় অনড় হলেও কংগ্রেস সম্পর্কে বাকিদের মতো ততটা কঠোর নয়। মাস কয়েক আগে সেখানে বিধানসভার দুটি আসনে লালুর দল একতরফা প্রার্থী ঘোষণা করে দেয়। ফলে কংগ্রেস ও আরজেডির ভোট ভাগাভাগির সুযোগে দুই আসনই জিতে যায় নীতীশ কুমারের জেডিইউ। তার পরই কংগ্রেসের সঙ্গে ফের মিতালী করতে উদ্যোগী হয়েছেন লালু। বিহার বিধান পরিষদের আসন্ন ভোটে কংগ্রসের সঙ্গে বোঝাপড়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। রাজ্য কংগ্রেস তাতে আপত্তি তোলায় লালু ফোনে কথা বলেছেন কংগ্রেস সুপ্রিমো সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে।
এদিকে, শুধু সংসদেই নয়, দু’দিন আগে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর দল আর কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে নেই। তিনিও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যগুলিকে উপেক্ষা করার অভিযোগ এনেছেন। শুধু তাই নয়, হঠাৎই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই তেলুগু নেতা মোদীর গুজরাট মডেলকে নানা ভাবে উপহাস করেছেন। তুলে ধরেছেন তাঁর তেলেঙ্গানা মডেল। যা থেকে অনেকেই মনে করছেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম মুখ হয়ে ওঠাও টিআরএস প্রধানের লক্ষ্য।