এভাবেও ফিরে আসা যায়! হ্যাঁ, এই কথাই যেন রবিবার সারমর্ম হয়ে রইল রড লেভার এরিনার। ইতিহাস তৈরি করলেন রাফায়েল নাদাল। রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচকে টপকে প্রথম পুরুষ টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন তিনি। অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে রাশিয়ার দানিল মেদভেদেভকে হারালেন ২-৬, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৭-৫ গেমে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতলেন তিনি। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলল লড়াই। প্রথম দুটি সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন নাদাল। কী ভাবে খাদের কিনারায় থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে নেওয়া যায় জয়, তা রবিবার আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন নাদাল।
উল্লেখ্য, মাস ছয়েক আগে ক্রাচ নিয়ে হাঁটার ছবি পোস্ট করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন তো দূর, ভবিষ্যতে আর কোনও প্রতিযোগিতাতে নামতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। যখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন, তখন আক্রান্ত হলেন করোনায়। অস্ট্রেলীয়ান ওপেনে খেলা নিয়ে আরও বড় সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পুরো বিশ্ব যখন নোভাক জোকোভিচকে নিয়ে মেতে, তখন নীরবে অনুশীলন করে গিয়েছেন তিনি। পায়ের চোট ভুগিয়েছে এই প্রতিযোগিতাতেও। কিন্তু সব যন্ত্রণা ও প্রতিবন্ধকতা জয় করেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন তিনি।
প্রথম দুটি সেটে নাদালকে দেখে এক বারের জন্যেও মনে হয়নি তিনি ফাইনালে খেলতে নেমেছেন। প্রথম সেটে প্রথম দু’টি সার্ভ ধরে রাখলেন। তৃতীয় সার্ভেই তাঁকে ভেঙে দিলেন মেদভেদেভ। চতুর্থ সার্ভে ফের। ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ড কোনও কিছুই যেন ঠিকঠাক হচ্ছিল না নাদালের। অনায়াসে ৬-২ গেমে জিতে নিলেন সেই সেট। দ্বিতীয় সেটের শুরুতে নাদালকে দেখে মনে হল, প্রথম সেটের ধাক্কা কাটাতে মরিয়া তিনি। চতুর্থ সেটেই মেদভেদেভকে ব্রেক করলেন তিনি। দেখা গেল সেই পুরনো নাদালকে। এক সময় ৪-১ গেমে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ফের ছন্দ হারালেন। স্পেনীয়কে ব্রেক করলেন মেদভেদেভ। নাদাল ৫-৩ এগিয়ে যাওয়ার সময় ফের ব্রেক করলেন নাদালকে। সেটও পকেটে পুরে নিলেন।
তবে, স্পেনীয় তারকার অন্যতম বড় শক্তিই হল, যত খেলা গড়ায় ততই তিনি ছন্দ ফিরে পান। পরের দু’টি সেটেই সেটা ভাল ভাবে টের পেলেন রাশিয়ার খেলোয়াড়। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে কিছু অবিশ্বাস্য শট দেখা গেল নাদালের র্যাকেট থেকে। প্রতিপক্ষকে কোনও সুযোগই দিচ্ছিলেন না। পঞ্চম সেটে আবার দেখা গেল তুল্যমূল্য লড়াই। কেউই কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না। প্রতিটা গেমেই তীব্র লড়াই চলছিল। দু’জনেই একে অপরকে এক বার করে ব্রেক করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ হাসলেন নাদালই। গোটা স্টেডিয়ামে দর্শক সমর্থনও তাঁর দিকেই ছিল। প্রতিটা পয়েন্ট জেতার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র উল্লাস হচ্ছিল। তবে হেরে গেলেও এক ফোঁটা খাটো হচ্ছে না মেদভেদেভের কৃতিত্ব। জোকোভিচের পর নাদালের থেকেও প্রায় ট্রফি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার দাম অনেক, সেটা বুঝিয়ে দিলেন নাদাল।