রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের পরিচালিত নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটাগরির পরীক্ষায় ৩৫ হাজার ২৮১টি পদে রেলের চাকরির জন্য ১ কোটি ২৫ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছিল। অর্থাৎ একটি পদের জন্য ৩৫৪ জন আবেদনকারী! কিন্তু আচমকাই পরীক্ষার নিয়ম বদলে যাওয়ায় প্রজাতন্ত্র দিবসে উত্তাল হয়ে ওঠে উত্তরপ্রদেশ, বিহার। ওই দুই রাজ্যে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ, হিংসার পরে বিরোধী শিবিরের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, দেশের বেকারত্বের সমস্যারই প্রতিফলন। কোভিডের আগেই এই সঙ্কট তৈরি হয়েছিল এবং কোভিডের সময়ে তা আরও গভীর হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯-এ রেলের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটেগরি (এনটিপিসি)-তে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। বলা হয়েছিল, প্রথম দফার পরীক্ষার পরেই নিয়োগ হবে। কিন্তু ১৫ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ের ফল প্রকাশের পরে রেল জানায়, দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার নিয়ম বদলে ফেলার পরেই উত্তরপ্রদেশ, বিহারে বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রেনে আগুন লাগানো হয়। কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে বেকারত্ব বাড়ছে দেখে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিন বছরে নিয়োগ দূরের কথা, নিয়োগের প্রক্রিয়াই শেষ হয়নি। নরেন্দ্র মোদী বছরে ২ কোটি চাকরির কথা বলেছিলেন। সেই হিসেবে ৭ বছরে ১৪ কোটি চাকরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চাকরি দেওয়ার বদলে রেলের মতো ক্ষেত্রেও পদ তুলে দেওয়া হয়েছে।
আবার, সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের মতে, তরুণ প্রজন্মের এই ক্ষোভই বিজেপির পতনের কারণ হবে। রেলের চাকরিপ্রার্থীরা শুক্রবার রেল রোকো-র ডাক দিয়েছেন। কংগ্রেস তাকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে চাকরিপ্রার্থীদের শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে বিরোধী নেতারা। কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীরা তিন বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। এখ অনিয়মেরর অভিযোগ ওঠায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু নতুন করে পরীক্ষা হলে যাঁরা ২০১৯-এ আবেদনের যোগ্য ছিলেন, ২০২২-এ তাঁদের আর যোগ্যতা থাকবে না।’
অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা অশ্বিনী দেশপাণ্ডের বক্তব্য, ‘৩৫ হাজার ২৮১টি পদের জন্য ১ কোটি ২৫ লক্ষ আবেদন জমা পড়ার অর্থ একটি চাকরির জন্য ৩৫৪ জনের আবেদন। এক জন নির্বাচিত হলে ৩৫৩ জন বাদ যাবেন। সংরক্ষণের জন্য নয়। এর কারণ হল, যথেষ্ট চাকরি নেই। ৭ লক্ষ জনকে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করার পরেও প্রতিটি পদের জন্য ২০ জন চাকরিপ্রার্থী থাকছেন।’ অন্যদিকে, জানুয়ারির গোড়ায় সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)-র প্রধান মহেশ ব্যাস বলেছিলেন, দেশে ৫ কোটি ৩০ লক্ষ বেকার। তাঁদের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি মানুষ চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু ১.৭০ কোটি মানুষের চাকরি না থাকলেও চাকরির সন্ধান করাই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে চাকরি পেলে করবেন। এই ১.৭০ কোটি বেকার মানুষের মধ্যে ৯০ লক্ষ মহিলা। তাঁদের রোজগারের প্রয়োজন থাকলেও তাঁরা আর সক্রিয় ভাবে চাকরি খুঁজছেন না। এঁদের সকলের জন্যই অবিলম্বে চাকরির বন্দোবস্ত করা দরকার।