বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের দাপটের মধ্যেই এবার আরও এক নয়া করোনা স্ট্রেনের হদিশ মিলল দক্ষিণ আফ্রিকায়। নিওকভ নামে এই নতুন প্রজাতির করোনার প্রভাব মারাত্মক। প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে একজনের মৃত্যু হবে এই স্ট্রেনে। এমনই আশঙ্কার বাণী শুনিয়েছেন ভাইরাসের আঁতুড়ঘর উহানের বিজ্ঞানীরা।
চিনা বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত একটি গবেষণা রিপোর্ট জানাচ্ছে, নিওকভ প্রজাতির করোনা নতুন নয়। পূর্বের এমইআর-কভ ভাইরাসেরই একটি বংশধর এটি। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এটি পাওয়া গিয়েছিল। এসএআরএস-কভ-২ এর ন্যয় এটিও মানবদেহে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।
হু-র তরফে আরও জানানো হয়েছে, যেহেতু ওমিক্রণ ১.০ অথবা বিএ ১.০ মিউটেশন করে বিএ.2-তে রূপান্তরিত হচ্ছে। যেখানে স্পাইক প্রোটিনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হচ্ছে এবং ফলে আরটিপিসিআর টেস্টেও তা ধরা পড়ছে না। ভারত এবং পিলিপিনসে এই বিএ.2 প্রজাতির ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় কেবল বাদুড়ের শরীরেই এই ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। তবে একটি সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, নিওকভ এবং তাঁর বংশধর PDF-2180-Cov মানবশরীরেও সংক্রমণ ছড়াতে সক্ষম।
যদিও দেশের কত শতাংশ মানুষ BA.2 ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন, সেই তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। হু জানিয়েছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্টের আরও তিনটি বংশধর রয়েছে। BA.1, BA.2 এবং BA.3। এর মধ্যে BA.2 কিংবা ওমিক্রণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অফ বায়োফিজিক্সের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে নিওকভ স্ট্রেনটি এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, আর একবার মাত্র মিউটেট করলেই সেটি মানবদেহে সংক্রমণ ছড়ানোর মতো ক্ষমতা তৈরি করে ফেলবে।
একইসঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়ে এই গবেষণা জানাচ্ছে নিওকভ স্ট্রেনটি সহজেই ফাঁকি দিতে পারবে ভ্যাকসিন থেকে তৈরি অ্যান্টিবডিকেও। একইসঙ্গে চিনা গবেষকরা এও জানাচ্ছেন, নিওকভ স্ট্রেনটি বাড়াতে পারে মৃত্যুর হারও। প্রতি তিনজন আক্রান্তের মধ্যে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে এই করোনার স্ট্রেনে। বর্তমান করোনার প্রজাতির তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হারে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে এই স্ট্রেন।
রাশিয়ার স্টেট ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার চিনা গবেষকদের রিপোর্টে সম্মতি প্রকাশ করেছে। রুশ গবেষকদের বক্তব্য, ”মানবদেহে এই স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়বেই। কিন্তু, তারচেয়েও বড় উদ্বেগের বিষয় এটি কতটা মারাত্মক হতে পারে?”
অন্যদিকে, গোটা বিশ্বের পাশাপাশি এখন ভারতেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওমিক্রণ BA.2। বৃহস্পতিবার আরও উদ্বেগের কথা জানাল কেন্দ্র। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোলের ডিরক্টর ডা. সুজিত কুমার সিং একটি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ”ভারতে এখন ওমিক্রণ BA.2-এর প্রভাব আরও প্রবল।”