রবিবার রেড রোডে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মোদী সরকারকে ফের একহাত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “একটা স্ট্যাচু করে দিলেই নেতাজীকে ভালবাসা যায় না। একটা স্ট্যাচু করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। অনেক তো স্ট্যাচু করেছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে। দেশের ইতিহাসটাকে পড়েছেন?” অর্থাৎ, মমতা বুঝিয়ে দিলেন, দেশপ্রেম দেখনদারি নয়। তা আত্মস্থ ও উপলব্ধি করতে হয়। ময়দানে নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান করার পর ‘অমর জওয়ান জ্যোতি’ ও নেতাজীর ট্যাবলো বাতিল, একের পর এক নানান ইস্যুতে কেন্দ্রকে বিঁধলেন মমতা। মনে করালেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে, ভারতের সম্প্রীতি রক্ষায় বাংলার অবদানের কথা। কেন্দ্রকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে দিলেন, “আজ বাংলাকে এত অবজ্ঞা। সবটাই তো বাংলাকে ঘিরে। বাংলার ইতিহাস মুছে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। ভারতের ইতিহাস মুছে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।”
উল্লেখ্য, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে নেতাজী রহস্য তারা শীঘ্রই উদঘাটন করবে। নেতাজী সংক্রান্ত সব ফাইল প্রকাশ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পুরো বিপরীত চিত্র। এর কোনওটিই করতে পারেননি নরেন্দ্র মোদী। সেকথা মনে করিয়ে মমতার কটাক্ষ, “আজও নেতাজীর রহস্য উদঘাটন করতে পারলেন না। স্ট্যাচুতে লিখেছেন জন্মদিন, মৃত্যুদিন লিখতে পারবেন তো? আমরা কেউ পারব না। স্বাধীনতার পর ৭৫ বছর কেটে গেল, অথচ আজ অবধি একটা রহস্য উদঘাটন করা গেল না? মূর্তি দিয়ে সবকিছু হয় না। অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। নেতাজীকে আত্মস্থ করতে হয়।” মুখ্যমন্ত্রী জানান, নেতাজী নিয়ে রাজ্যের যা যা করণীয় ছিল সেটা রাজ্য সরকার করেছে। কিন্তু কেন্দ্র নিজেদের প্রতিশ্রুতিপালনে ব্যর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “নেতাজী রহস্য উদঘাটিত করেনি সরকার। আমাদের কাছে যা যা কাগজপত্র ছিল সব আমরা প্রকাশ করেছি। সমস্ত কাগজপত্র ডিজিটালাইজ করা হয়েছে।”
পাশাপাশি মমতার অভিযোগ, নেতাজীর মতবাদকে গ্রহণ করেনি কেন্দ্র। ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রের প্ল্যানিং কমিশন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে যেমন তিনি একহাত নিয়েছেন, তেমনি মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে এসেছে ট্যাবলো বিতর্কও। মমতা বললেন, “নেতাজীর ট্যাবলো আপনারা কেন বাতিল করেছেন আমরা জানি না। আমাদের দেখানো হয়নি, জানানো হয়নি। কিন্তু মনে রাখবেন ২৬ জানুয়ারি রেড রোডে নেতাজির ট্যাবলো দেখানো হবে। আপনারা প্রত্যাখ্যান করলেও আমরা কিন্তু সাদরে বরণ করে নেব।” মুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, “আজকে তো স্ট্যাচু করছেন আমাদের চাপে। এতদিন তো মনে হয়নি। একটা স্ট্যাচু করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। অনেক তো স্ট্যাচু করেছেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে। দেশের ইতিহাসটাকে পড়েছেন? নেতাজীকে পড়ুন। দেশকে ভালবাসুন। দেশকে ভালবাসলে কখনও গৃহবিবাদ হয় না। দেশকে ভালবাসলে কখনও হিন্দু-মুসলমান করতেন না।”