করোনার প্রকোপে রাজ্যের নানান জায়গায় বাজার বন্ধ থাকছে। প্রতিদিন তাজা সব্জি বা টাটকা ফল ছাড়া যাঁদের চলে না, তাঁরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার নিজেই এগিয়ে এসেছে অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে তাজা সব্জি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। শুধু সব্জি নয়, মুদি সামগ্রীও তারা পৌঁছে দেবে গৃহস্থের ঘরে ঘরে। বাড়িতে বসে অনলাইনে অর্ডার করলেই রাজ্যের বিভিন্ন কৃষি খামার থেকে উৎপাদিত সব্জি পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। এই পরিষেবা চালু করতে রাজ্য সরকার বেছে নিয়েছে কৃষি বিপণন দফতরের ‘সুফল বাংলা’ প্রকল্পকে। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন বিপণীতে এই ব্যবস্থা থাকলেও, সরকারিভাবে রাজ্যের মানুষকে এই পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ এই প্রথম। এই পরিষেবার মাধ্যমে শুধু যে মানুষ বাড়িতে বসে তাজা শাকসব্জি পাওয়া যাবে, তাই নয়, সব সামগ্রীই মিলবে ন্যায্যমূল্যে। অতএব বাজারে গিয়ে দরাদরি করার ঝক্কি পোহাতে হবে না সাধারণ মানুষকে। অনলাইনে অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়া যাবে অর্ডার। করা যাবে অনলাইন পেমেন্ট। যে কোন জায়গা থেকে নানা কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেও প্রয়োজনীয় শাকসব্জি ও মুদি সামগ্রীর অর্ডার করতে পারবেন মানুষ। এবং তা খুব কম সময়েই পৌঁছে যাবে বাড়িতে।
এপ্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ইতিমধ্যেই অনলাইন ডেলিভারি দেওয়ার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কিছু বিপণি সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। কী কী পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে প্ল্যান অব অ্যাকশন। প্রথমত, কাঁচা সব্জি বাদ দিয়ে অন্যান্য সামগ্রী মজুতের জন্য গুদামঘর লাগবে। এর জন্য রাজ্য সরকারের কোনও পরিকাঠামো ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বর্তমানে সুফল বাংলার চলমান স্টলেই পাওয়া যায় কাঁচা শাকসব্জি। আর স্থায়ী স্টলগুলিতে শাকসব্জির পাশাপাশি মেলে রাজ্যে উৎপাদিত সব ধরনের সুগন্ধী ও সাধারণ চাল, ডাল, মধু, ঘি, মশলা, সর্ষের তেল, জ্যাম ও জেলি। কলকাতা ও শহরতলির কিছু স্টলে মাছ-মাংসও পাওয়া যায়। অনলাইনের মাধ্যমে অর্ডার দিলে এই সব সামগ্রী বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ। প্রথম ধাপে এই পরিষেবা শুরু হবে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। তারপর ধাপে ধাপে ছড়িয়ে দেওয়া হবে জেলা শহরগুলিতেও।
উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যে সুফল বাংলার ৩৪৬টি স্টল রয়েছে। যার মধ্যে ৫৩টি স্থায়ী ও বাকিটা চলমান। কলকাতা ও শহরতলিতে এই চলমান স্টলগুলি ঘুরে ঘুরে কাঁচা শাকসব্জি ও ফল বিক্রি করে। রাজ্যে সুফল বাংলা চালু করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে ন্যায্যমূল্যে শাকসব্জি কেনার সুযোগ করে দেওয়া। এই প্রকল্পে ফার্মার্স প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে চাষিরা সরাসরি তাঁদের উৎপাদিত ফসল মানুষকে বেচতে পারেন। বর্তমানে সুফল বাংলার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। অনলাইন পরিষেবা শুরু হলে এই অঙ্ক বহুগুণ বাড়বে বলেই মত রাজ্যের আধিকারিকদের। মাত্র ১৪টি স্টল নিয়ে ২০১৪ সালে সুফল বাংলা প্রকল্প শুরু হয়। ২০১৬ সালে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যখন আকাশ ছুঁয়েছিল, তখনই মানুষের দুয়ারে ন্যায্যমূল্যে সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। সিদ্ধান্ত হয়েছিল অনলাইন পরিষেবা চালু করার। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সুফল বাংলার চলমান গাড়ি সব্জি নিয়ে ঘুরেছিল পাড়ায় পাড়ায়। কিছু জায়গায় পাড়ার স্টল থেকেও সংলগ্ন এলাকায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এবার অনলাইনে অর্ডার নিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য সরকার।