কোনও জনগোষ্ঠী, রাজ্য বা দেশে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ডবল ডোজ টিকাকরণ হলে, বলা যেতেই পারে সেই জায়গায় মানুষের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। মহামারীবিদ্যার এই কথাগুলির সঙ্গে করোনার প্রথম ঢেউ থেকেই পরিচিত হয়েছে মানুষ।
বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ১৮ উর্ধ্ব প্রথম ডোজ টিকাকরণ হয়েছে লক্ষের ৯৪ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে ৬ কোটি ৫৫ লাখ মতো। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন বা ডবল ডোজ টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ বা ৪ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষের। রাজ্যে ১৮ উর্ধ্ব জনসংখ্যা ৬.৯৯ কোটি।
এইদিক থেকে হাম বা অন্যান্য কিছু রোগের টিকাকরণের সঙ্গে করোনা টিকাকরণের উদ্দেশ্যে ফারাক আছে। এমনই মত তাঁর। আনুমানিক এক সপ্তাহ পর, ৭০ শতাংশ ডবল ডোজ টিকাকরণ হলে বাংলা কি হার্ট ইমিউনিটি অর্জন করবে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ অজয় চক্রবর্তী মুচকি হেসে বলেন, জেনে না জেনে এত মানুষ সংক্রামিত হয়ে গিয়েছেন যে, হার্ড ইমিউনিটি আমরা মনে হয় অনেক আগেই অর্জন করে ফেলেছি।
৭০ শতাংশ টিকাকরণ বা ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ডবল ডোজের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে বাকি আর মাত্র ১৭ লক্ষ ডোজ। টিকাকরণের পদস্থ কর্তারা বলছেন, এই ১৭ লক্ষ ডোজ দেওয়া হয়ে যাবে আগামী এক থেকে বড়জোর দেড় সপ্তাহের মধ্যেই। তারপর? তারপর কি বাংলার মানুষ বহু প্রতীক্ষিত হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করে ফেলবে? জনস্বাস্থ্য এবং মহামারী বিশেষজ্ঞদের মুখে এখন এটাই জোর চর্চার বিষয়।
আইসিএমআর-এর মহামারীবিদ্যার প্রধান ডাঃ সমীরণ পাণ্ডা বলেন, কোনও জনগোষ্ঠীর ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ ডবল ডোজ পেলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে বলা যায়। কিন্তু ‘হার্ড ইমিউনিটি’ মানে মানুষ কি আর সংক্রামিত হবে না? ডাঃ পাণ্ডা বলেন, হার্ড বলতে পাল বা গোষ্ঠী বা দল। ইমিউনিটি বলতে প্রতিরোধ ক্ষমতা। মিলিতভাবে অর্থ কোনও গোষ্ঠীর প্রতিরোধ ক্ষমতা।
তাঁর মতে, করোনা ভ্যাকসিনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে সংক্রমণজনিত জটিলতা কমানো, মৃত্যু কমানো। সংক্রমণ সম্পূর্ণ আটকে দেওয়ার দাবি কখনই করোনার টিকা করেনি। তাই করোনা ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অর্জিত হার্ড ইমিউনিটির মানেও স্পষ্ট। জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনার জটিলতা একেবারে কমিয়ে দেওয়া। যাতে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষের মরণাপন্ন অবস্থা না হয়।