আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। জোরকদমে চলছে তার প্রস্তুতি। এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেমে কর সম্পর্কিত বেশ কিছু বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, নয়া বাজেটে এই অসামঞ্জস্যগুলি দূর করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করুক মোদী সরকার।
এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ-এর স্কিমগুলি বেতনভোগীদের জন্য উপলব্ধ। অন্য দিকে পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ-এর স্কিমগুলি সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে যে কেউ তাঁর অবসরকালের জন্য টাকা জমাতে পারেন। ইপিএফ এবং পিপিএফ– দু’টি স্কিমই সম্পূর্ণ ট্যাক্স ফ্রি। কিন্তু এনপিএস-এ লগ্নিকারীর বয়স ৬০ বছর হলে অথবা লগ্নিকারী প্রকল্প থেকে একেবারে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে, মোট জমার ৪০ শতাংশ অবধি তুলতে পারবেন৷ বাকি ৬০ শতাংশ দিয়ে নির্ধারিত কয়েকটি জীবন বিমা সংস্থার থেকে পেনশন কেনা আবশ্যিক৷
এটাকেই কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র এনপিএস গ্রাহকদের এ ভাবে অ্যানুইটি ক্রয় করতে বাধ্য করা অনুচিত। ইপিএফ এবং পিপিএফ প্রকল্পে গ্রাহক কোথায় তাঁর টাকা বিনিয়োগ করবেন সে ব্যাপারে স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্ত এনপিএসে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছে। অবসরের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন মিলবে তা ৬০ বছর বয়সের একজন মানুষ ভালোই বোঝেন, তাই এই নিয়ে তাঁকে জোর করা ঠিক নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইপিএফ, পিপিএফ এবং এনপিএসের জন্য সমান বিধান আনা উচিত সরকারের। আর এ জন্য এনপিএস-কেও সম্পূর্ণ করমুক্ত করতে হবে। এক জন গ্রাহকের দুটি এনপিএস অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে। প্রথমটি হল, টায়ার ওয়ান, যা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয়টি হল টায়ার টু, যা ঐচ্ছিক। টায়ার টু অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহক যখন খুশি টাকা তুলতে পারেন বা টায়ার ওয়ান অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারেন।
বর্তমানে টায়ার ওয়ান অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে নিয়মগুলি পরিষ্কার। কিন্তু টায়ার টু অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা বা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ট্যাক্সের কোনও বিধান নেই। এর ফলে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই গোটা বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে সরকারের উচিত, টায়ার টু অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রেও সমান নিয়ম জারি করা।
এনপিএস প্রকল্পে টায়ার টু-তে লগ্নীর উপর কর ছাড় পেতে পারেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। ৮০ সি ধারায় তাঁরা এই আবেদন করতে পারেন। কিন্তু অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা এই সুবিধা পান না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা শুধু বৈষম্য নয়, দ্বিচারিতা। একই প্রকল্পে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা একটি বিশেষ সুবিধা পাবেন, অথচ বাকি করদাতারা পাবেন না, এ কেমন বিচার! তাই এনপিএস টায়ার টু-র সমস্ত গ্রাহকদের জন্যই একই সুবিধা আনার দাবি করছেন তাঁরা।
এনপিএসে যোগদানকারী কোনও বেসরকারি নিয়োগকর্তা সংস্থাও বর্তমানে কর্মীদের জন্য খরচ করা অনুদানের অর্থের উপর করছাড় পেতে পারেন আয়কর আইনের সিসিডি (২) ধারায়। তবে, ওই করছাড়ের সর্বাধিক পরিমাণ হবে কর্মীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ওই সীমা কর্মীদের মূল বেতনের ১৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈষম্যের পিছনেও কোনও যুক্তি নেই। তাই এই অসঙ্গতিগুলি দূর করে নয়া বাজেটে এনপিএস প্রকল্পে সংশোধনী করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।