মেলেনি কোনও সুরাহাই। কৃষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রক্ষা করেনি মোদী সরকার। সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল অসন্তোষ উগরে দিয়ে ফের বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক নেতারা। আগামী ৩১শে জানুয়ারি ‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবস’ পালন করা হবে বলে জানিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। গত ৯ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার সংযুক্ত কিষাণ মোর্চাকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলমান কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিল। আর সেই চিঠির ভিত্তিতেই টানা ১৩ মাসের কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিল কিষাণ মোর্চা। কিন্তু চিঠিতে দেওয়া একটিও প্রতিশ্রুতি এখনও পর্যন্ত পালন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করতে আইন আনার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও এখন শীতঘুমে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তুলে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। সেইসঙ্গে তাদের ঘোষণা, আগামী ৩১শে জানুয়ারি গোটা দেশে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবস’ পালন করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার মোর্চার পর্যালোচনা বৈঠকে ফের আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দিল্লী-হরিয়ানার সিংঘু সীমান্তের কাছে কাজারিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিল শতাধিক কৃষক সংগঠন। গত ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কৃষক আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এটাই ছিল সংযুক্ত কিসান মোর্চার প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে ‘মিশন উত্তরপ্রদেশ’ কর্মসূচী অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে কিষাণ মোর্চা বলেছে, লখিমপুর-খেরি হত্যাকাণ্ডে যোগী সরকার এবং বিজেপির নির্লজ্জ মনোভাব থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা জনজীবনের মর্যাদাকে পাত্তা দেয় না। এসআইটি রিপোর্টে ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করা সত্ত্বেও এই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী অজয় মিশ্র টেনি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বহাল থেকে কৃষকদের ক্ষতে লবণ দিচ্ছেন। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এই ঘটনায় কৃষকদের জড়িয়ে দিতে ও গ্রেফতার করতে তৎপর। বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় এবার লখিমপুর-খেরিতে স্থায়ী অবস্থান বিক্ষোভের ঘোষণা করবে সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা। একইসঙ্গে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ‘মিশন উত্তরপ্রদেশ’ কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃষক বিরোধী রাজনীতিকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে।
পাশাপাশি পর্যালোচনা বৈঠকে কৃষক নেতারা পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে মোর্চার অংশগ্রহণ সম্পর্কে চলতে থাকা বিতর্কেরও অবসান ঘটিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত কিষান মোর্চা প্রথম থেকেই জানিয়েছিল যে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দল মোর্চার নাম, ব্যানার বা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে না। বিধানসভা নির্বাচনেও একই নীতি প্রযোজ্য। সম্মিলিত কিসান মোর্চার নাম বা ব্যানার বা প্ল্যাটফর্ম কোনও দল বা প্রার্থী নির্বাচনে ফায়দা তোলার জন্য ব্যবহার করতে পারবে না। কোনও কৃষক সংগঠন বা নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সংযুক্ত কিসান মোর্চায় থাকবেন না। প্রয়োজনে বিধানসভা নির্বাচনের পর এপ্রিল মাসে এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে। আগামী ২৩ ও ২৪শে ফেব্রুয়ারি দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি চারটি শ্রমবিরোধী কোড প্রত্যাহারের পাশাপাশি কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টির দাবিতে এবং বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। গ্রামীণ ধর্মঘটের আকারে এই আহ্বানকে সমর্থন ও সফল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিষাণ মোর্চা।