একুশের বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন কোচবিহারের শীতলকুচিতের এক বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিচালনায় চারজনের মৃত্যু ঘটে। শুরু হয় মামলা। এই মামলার তদন্তে সিআইএসএফ সাহায্য করছে না বলে সোমবার ফের একবার কলকাতা হাইকোর্টে নালিশ করলেন রাজ্যের আইনজীবী। এদিন শুনানির সময় রাজ্যের তরফের আইনজীবী অভিযোগের সুরে বলেন, “সিআইএসএফ তদন্তে সাহায্য করছে না বলেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।” হাইকোর্ট এদিন নির্দেশ দিয়েছে, ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্তের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সিআইডিকে আদালতে রিপোর্ট দিতে হবে।পাশাপাশি সিআইএসএফকেও রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই শীতলকুচি গুলিচালনার তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি।
এপ্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী আরও জানান, শীতলকুচি নিয়ে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে এদিন আদালতে প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল ওয়াইজে দস্তুর। সিআইএসএফের হয়ে সওয়াল করছেন দস্তুর। অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, “বিধানসভা ভোটের দিন গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনা নিয়ে যিনি মামলা করেছেন, সেই মামলাকারী ঘটনাস্থল থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে ছিলেন। এত দূরে বসে ঘটনার প্রকৃত তথ্য না জেনে আদালতকে মামলাকারী বিভ্রান্ত করছেন। আদালতের সময় নষ্ট হচ্ছে। তাই এই মামলা না শুনে অবিলম্বে তা খারিজ করে দেওয়া উচিত আদালতের।”
এরপর পাল্টা সওয়ালে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, শীতলকুচির তদন্তে সিআইডির সঙ্গে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। এই অভিযোগ এদিনই প্রথম নয়। এর আগেও একই অভিযোগ একাধিকবার করা হয়েছে। তার কারণ, সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বারবার সিআইএসএফ জওয়ানদের ভবানীভবনে ডাকা হলেও, তাঁরা আসেননি।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশনাল বেঞ্চে এদিন শীতলকুচি মামলার শুনানি ছিল। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফার ভোটের দিন, শীতলকুচির বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ভোটের দিন সকালে পাঠানটুলিতে আনন্দ বর্মন নামে বছর তেইশের এক যুবকের মৃত্যু হয়। তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে খবর আসে মাথাভাঙা ও শীতলকুচির মধ্যবর্তী এলাকা জোরপাটকিতে গুলি চালায় সিআইএসএফ। তাতে প্রাণ হারান চার জন।
স্বাভাবিকভাবেই ভোট চলাকালীন শীতলকুচির এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তৎকালীন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ রাজ্য বিজেপি-র একাধিক নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর গুলিচালনার পক্ষে সলওয়াল করে, বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ক্ষমতায় ফিরে সিআইডিকে দিয়ে শীতলকুচির তদন্ত করাবেন। সেই প্রতিশ্রুতি মতোই সিআইডির হাতে তদন্তভার তুলে দেন। এদিকে কলকাতা হাইকোর্টেও জোড়া জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানি পর্বে আগেই কেন্দ্র ও রাজ্যকে হলফনামা দিতে বলেছিল আদালত। রাজ্যকে হলফনামায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বিশদ উল্লেখ করতে বলা হয়। অন্য দিকে, কেন্দ্রের কাছে বিশদ হলফনামায় জানতে চাওয়া হয় সিআইএসএফ কী ভাবে, কোন পরিস্থিতিতে গুলি চালিয়েছিল।