সুন্দরবনের চিরাচরিত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নিক কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের এই অমূল্য প্রাণীসম্পদ যাতে জঙ্গলের মধ্যে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঠিকমতো থাকতে পারের, তার জন্য কেন্দ্রেরই উদ্যোগী হওয়া উচিত। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানালেন, “সুন্দরবনের বাঘের উন্নতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সেরকমভাবে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায় না। বাঘ সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রের বিশেষ তহবিল রয়েছে। সেটি ঠিকমতো ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে।” পাশাপাশি, মন্ত্রী জানিয়েছেন যে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের বিচরণ ক্ষেত্র তৈরির জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা গড়ে তুলতে কেন্দ্র এগিয়ে আসুক। বিশেষ তহবিলের টাকা এই প্রকল্পে ব্যবহার করুক। এর পাশাপাশি জাইকার মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার কাছ থেকেও এই খাতে টাকা পাওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন লাগে।
উল্লেখ্য, গত এক মাসে সুন্দরবন জঙ্গল সংলগ্ন গ্রামগুলিতে পরপর বাঘ ঢুকেছে। এই প্রবণতা আটকাতে আরও জোরদার ব্যবস্থা করতে চাইছে রাজ্য বনদফতর। এর জন্য বড় বাজেটের প্রয়োজন। দফতর সূত্রে খবর, কোভিড পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন কারণে এখন রাজ্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বিশেষ এই প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ করা বেশ কঠিন। তাই অন্য জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে। জঙ্গল থেকে লোকালয়ে বাঘ ঢোকা আটকানোর জন্য সুন্দরবনের অনেক জায়গাতে প্লাস্টিকের তৈরি নেট বা জাল লাগানো আছে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ কাঁকড়া, মাছ সহ বনজ সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য জাল কেটে বনের মধ্যে প্রবেশ করেন। জাল কেটে দোলনা বানানোর ঘটনাও ঘটেছে। কাটা নেটের ফাঁক গলে বাঘ সহজে ঢুকে যাচ্ছে গ্রামে।
বারবার এমন ঘটনা আটকাতেই বিকল্প ব্যবস্থা করতে চাইছে দফতর। লোহার ফ্রেম দেওয়া অ্যালমুনিয়ামের তৈরি আরও মজবুত নেট লাগাতে চাইছে বন বিভাগ। এতে কত খরচ হবে তার প্রাথমিক হিসেবও তৈরি করা হয়েছে। মোট ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ নেট লাগাতে খরচ হতে পারে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। জরুরি কাজের জন্য বনকর্মীদের জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে হয়। বাঘের খাদ্য সরবরাহ করতে জঙ্গলের মধ্যে শুয়োর, ছাগল প্রভৃতি পাঠায় দফতর। এই সব কাজের জন্য নেটের মধ্যে দরজা রাখা হবে। বনদফতর মনে করছে, অল্প সময়ের মধ্যে গ্রামের ভিতরে বাঘ ঢুকে পড়ার এতগুলি ঘটনার মধ্যে বিশেষ অস্বাভাবিকতা কিছু নেই। বছরের এই সময় সঙ্গিনীর সন্ধানে বাঘ কিছুটা সক্রিয় হয়ে বেশি ঘোরাফেরা করে। এটা একটা কারণ হতে পারে। তাছাড়া খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে আসার সম্ভাবনাও আছে। বনদফতরের পক্ষ থেকে জঙ্গলের মধ্যে বাঘের খাদ্য হিসেবে জীবন্ত প্রাণী পাঠানোরও ব্যবস্থা আছে। এতে খাদ্যের অভাব হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকা থেকে খাদ্যের সন্ধানে তারা এদিকে চলে আসছে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের খাদ্যের অভাব এর কারণ হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। বনদফতর জানিয়েছে, সুন্দরবনের বাঘ গণনার কাজ চলছে। খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে এই প্রক্রিয়া।