এবার ত্রিপুরায় ফের বিতর্কে গেরুয়া শিবির। স্টেট রাইফেলস তথা টিএসআরে জওয়ান নিয়োগের মেধা তালিকা প্রকাশিত হতেই তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সেখানে। সম্প্রতি ১৪৩৭ জনের মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়েছে বিপ্লব দেবের রাজ্যে। এর পর থেকেই শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। গত কয়েক দিন ধরে চাকরি প্রত্যাশীরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর চালাচ্ছেন।
সিপাহীজলা জেলায় চড়িলাম-বিধানসভা কেন্দ্রের এক বিজেপি ‘পৃষ্ঠা প্রমুখ’ সংবাদমধ্যমের সামনেই বলেছেন, ‘ছেলের চাকরির জন্যে বিজেপির মণ্ডল সভাপতিকে টাকা দিয়েছি। তার পরেও চাকরি হয়নি।’ মেধা তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া চাকরি প্রত্যাশীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে তাতে। বুধবার কিছু বিক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশী সচিবালয়ের মূল ফটকের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। একাংশ চাকরি প্রত্যাশী বুধ ও বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা হাইকোর্টের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন। শেষে পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে এডিনগর পুলিশ লাইনে নিয়ে যায়।
চাকরি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘রাজ্যে চাকরি নিয়ে এমন কেলেঙ্কারি কখনও হয়নি। বিজেপি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। প্রায় চার বছরের মাথায় চাকরি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। বিজেপির নেতারাই একে অপরের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করছেন!’ তাঁর কটাক্ষ, ‘বিজেপি এত দিন স্বচ্ছতা নিয়ে দাবি করে আসছে। এই হচ্ছে তাদের স্বচ্ছতার নমুনা। এই সরকারের আমলে ভোট হোক বা কোনও বিলি-বণ্টন, কিংবা চাকরি— কোথাও কোনও স্বচ্ছতা নেই। সব চলছে দলের নির্দেশে।’
আবার, রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে এই কেলেঙ্কারির তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলের রাজ্য আহ্বায়ক সুবল ভৌমিক বলেন, ‘বিজেপি সরকার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যুবকদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করেছে। অধিকাংশ চাকরি হয়েছে অর্থ লেনদেনের ভিত্তিতে। বেকারদের বিক্ষোভের মুখে, জনরোষ থেকে বাঁচতে নেতা-মন্ত্রীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ এই বেকারদের কাছ থেকে যারা লক্ষাধিক করে টাকা নিয়েছে, নিরপেক্ষ তদন্তের ভিত্তিতে তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুবল।
এদিকে, টিএসআর নিয়োগে মেধা তালিকা নিয়ে অসন্তোষের জেরে বিজেপি কার্যালয়গুলিকে নিশানা করা হচ্ছে। সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মধুপুর এবং গকুলনগর বিজেপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর হয়েছে। অমরপুর, বিলোনিয়া, গন্ডাছড়া, ধর্মনগর, সোনামুড়া-সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষুব্ধ চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, অর্থের বিনিময়ে লিখিত পরীক্ষায় মাত্র ২৬ নম্বর পাওয়া, শারীরিক পরীক্ষায় দৌড়ে অসফল প্রার্থীরাও মেধা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। বিক্ষুব্ধ বেকারদের দাবি, সব অনিয়ম দূর করে সব পদের জন্য নতুন মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে।