জোর আলোচনায় ব্যস্ত ছিল রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহল। পলি নিষ্কাশন পরে সেই বিপুল পরিমাণ পলি ফেলা হবে কোথায়? তা নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন চলেছিল। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, বানতলায় কলকাতা চর্মনগরীর ভিতরের জমিতে ওই পলি ফেলা হবে। সব মিলিয়ে সাড়ে ২৫ হাজার বিঘারও বেশি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে খাল থেকে তোলা পলি ফেলার জন্য। ভাঙড় কাটা খাল, ‘আপার’ ও ‘লোয়ার’ বাগজোলা, ক্যান্টনমেন্ট, কেষ্টপুর খাল-সহ একাধিক খালের পলি নিষ্কাশন ও সেই পলি ফেলার পরিকল্পনা সম্বলিত হলফনামা সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দিয়েছে রাজ্যের সেচ ও জলপথ পরিবহণ দফতর। সেখানেই এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে।
দফতর সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে, খাল সংস্কারের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এ কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে কেএমডিএ জানিয়েছে, খাল থেকে তোলা প্রায় ২.৫ লক্ষ ঘনমিটার পলি কলকাতা চর্মনগরীর ভিতরে প্রায় ৭০ একর বিস্তৃত জমিতে ফেলা যেতে পারে। ওই প্রস্তাবের পরে দপ্তরের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চর্মনগরী সংলগ্ন এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোট ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কারণ, দপ্তরের আধিকারিকদের অনুমান, খাল সংস্কারের সময়ে আরও যে পরিমাণ পলি উঠবে, তার জন্য ওই ৭০ একর জমি যথেষ্ট নয়। বরং আরও কয়েক হাজার একর জমির প্রয়োজন হতে পারে।
এরপর সেই মতো যোগাযোগ করা শুরু হলে অনুর্বর জমিকে উর্বর করার জন্য সংলগ্ন এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতও উৎসাহ দেখায় বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। খাল থেকে তোলা পলি কোন কোন জমিতে ফেলা সম্ভব, তা নিয়ে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি থেকে দফতরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে সেচ ও জলপথ পরিবহণ দফতর এলাকাগুলি পরিদর্শন করে। দফতরের এক কর্তার কথায়, “সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার একর বা ২৫৭১২.৫ বিঘা অনুর্বর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে পলি ফেলার জন্য। চিহ্নিত অনুর্বর জমিতে পলি ফেলায় যে তাঁদের সম্মতি এবং উৎসাহ রয়েছে, সেই সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধান, সভাপতি এবং কেএমডিএ-র লিখিত চিঠি, জমির তথ্য— সবই হলফনামার সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে।”
তবে প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, পলি ফেলার জায়গা না হয় ঠিক হল। কিন্তু কবে থেকে পলি তোলার কাজ শুরু হবে, সেই ব্যাপারে তো এখনও নিশ্চিত ভাবে কিছু জানানো হয়নি। সম্ভাব্য সময় হিসাবে সেচ দপ্তর শুধু জানিয়েছে, জানুয়ারির চতুর্থ সপ্তাহে ওই কাজ শুরু হতে পারে। তবে সেটাও নির্ভর করছে ওই প্রকল্পের জন্য রাজ্য অর্থ দফতরের অনুমোদনের উপরে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত সেচ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে, আর্থিক অনুমোদনের জন্য দ্রুত ওই প্রকল্প-প্রস্তাব জমা দিতে। সেই সঙ্গে অর্থ দফতরকেও আদালতের নির্দেশ, প্রস্তাব খতিয়ে দেখে অনুমোদনের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদিও রাজ্যের সেচ ও জলপথ পরিবহণমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র জানাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রাথমিক পর্বের কাজও শুরু হয়েছে। তাঁর কথায়, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই খাল সংস্কারের কাজ করা হবে।”