কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। ৫৮ বছরের স্বপন বৈদ্য যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন, তেমনটা আশা করেননি তাঁর পরিবার। এমনকী নিজের উপর ভরসা ছিল না এই প্রৌঢ়ের। তবে ৭ই ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইলে একটি ফোন ফের আশা জাগিয়ে তুলল। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হল, “রোগীকে নিয়ে আসুন।” সময় নষ্ট না করে রাতেই গড়িয়ার বাড়ি থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের ‘স্কুল অফ ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড লিভার ডিজিজ’তে নিয়ে যাওয়া হয় স্বপনবাবুকে। পরেরদিন ঠিক দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিভাগের ওটি’র দরজায় লাল আলো জ্বলে ওঠে। অন্তত দশজন চিকিৎসক ও তিনজন নার্স মিলে প্রায় বারো ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করেলন। যার দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ জি. কে. ঢালি। অবশ্য বাইরে আরও একজন ছিলেন। তিনি ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী। ২০০৯ সালে তাঁর উদ্যোগে লিভার প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়। এই কাজের সঙ্গে সেই সময় থেকেই যুক্ত ছিলেন ডাঃ সুভাষ গুপ্ত।
এপ্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ডাঃ অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “খুব ভাল লাগছে যে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকদের উকর্ষতাকে এমন জায়গায় উন্নীত করেছে যে কারও সাহায্য ছাড়াই লিভার প্রতিস্থাপন করলেন। আগামী দিনে আরও মানুষের জীবন বাঁচাবেন ওঁরা।” এখানে ‘ওঁরা’ বলতে শল্য চিকিৎসক সুকান্ত রায়, সোমক দাস, তুহিনশুভ্র মণ্ডল, ক্রিটিক্যাল কেয়ার এবং অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসক তাপস ঘোষ, সৈকত ভট্টাচার্য দিব্যেন্দু দাস, শেখ মৈনুদ্দিন আহেমদ। অর্থাৎ এসএসকেএম হাসপাতালের টিম চিকিৎসক। শুক্রবার স্বপন বৈদ্যকে ছুটি দেওয়া হতে পারে। স্বপনবাবুর মেয়ে তৃপ্তি বলেন, “মাস দুয়েক আগে একবার ঠিক হয় লিভার প্রতিস্থাপন হবে। কিন্তু লিভার পাওয়া গেলেও তা বাতিল হয়ে যায়। কারণ, মৃত দাতার যকৃতের অবস্থা ভাল ছিল না। তাই এবার খুব টেনশনে ছিলাম।”
উল্লেখ্য, প্রায় একযুগ ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনে প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করছেন ডা সুভাষ গুপ্ত। এদিনও তিনি হাজির ছিলেন। তাঁর কথায়, “এতদিন ধরে যে লক্ষ্যে কাজ করছিলাম এবার তা সাফল্যের মুখ দেখল। সবসময় এই হাসপাতালের পাশে থাকব।” গত ৭ই ডিসেম্বর এই হাসপাতালেই ব্রেন ডেথ হয় সূর্যকান্ত মণ্ডলের। তাঁর লিভারেই নতুন জীবন পেলেন স্বপনবাবু। হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মৈনুদ্দিন আহমেদের কথায়, “যকৃতের হেপাটিক ধমনী জুড়তে অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন। তবে গত জুলাইয়ে সেই পরীক্ষাতেও পাশ করে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আর রোগীকে কাউন্সেলিং করে অস্ত্রোপচারের টেবিল পর্যন্ত নিয়ে আসাও একটা কঠিন পরীক্ষা। সেই কাজটাও করেছেন সবাই।” এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এসএসকেএম অধিকর্তা ডা মনিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভাগীয় প্রদান অধ্যাপক গোপালকৃষ্ণ ঢালি-সহ অন্যান্যরা। বস্তুত, নিজস্ব দক্ষতায় সফলভাবে সম্পন্ন হল এই অস্ত্রোপচার।
