ভারতীয় রাজনীতি সম্বন্ধে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকে মর কাছেই হরিশ রাওয়াত একটি সুপরিচিত। প্রতিকূল সময়ে একাধিকবার কংগ্রেসকে টেনে তুলেছেন এই প্রবীণ নেতা। কিন্তু তাঁর প্রতিই এবার গা-ছাড়া মানসিকতা দেখাচ্ছে দল। আগামী বছরের শুরুতেই উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। এই অবস্থায় কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াত। বুধবার তাঁর টুইট, “এটা খুব আশ্চর্য না! নির্বাচনী সমুদ্রে এখন আমাদের হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব আমাকে সমর্থন করার পরিবর্তে দায়সারা মানসিকতা দেখাচ্ছে।” রাওয়াতের এই টুইট সামনে আসার পরই মাঠে নেমে পড়েন কংগ্রেসত্যাগী আরও এক প্রবীণ নেতা অমরিন্দর সিং। টুইটে পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর খোঁচা, “বীজ বুনেছেন যেমন, ফলও তেমনই পাচ্ছেন!” উল্লেখ্য, রাওয়াত পাঞ্জাবের কংগ্রেস ইন-চার্জ থাকাকালীনই দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন অমরিন্দর। সেই প্রেক্ষিতেই রাওয়াতকে কটাক্ষ করেছেন তিনি। রাওয়াতের কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, বিজেপিশাসিত উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সুযোগকে কার্যত হেলাফেলা করছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, ভোটের আগে রাওয়াতের মতো প্রবীণ নেতার এই উষ্মা প্রকাশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে ভালোমতোই চাপে ফেলে দিল।
পাশাপাশি, আরও একবার শীর্ষ নেতৃত্বে প্রবীণ বনাম যুব সম্প্রদায়ের লড়াই প্রকট হয়ে উঠল। এমনিতেই দলের ২৩ বিদ্রোহী নেতাকে কোনওভাবেই বাগে আনতে পারছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। সেই তালিকায় আরও এক প্রবীণের নাম জুড়তে চলেছে বলেই বিশেষজ্ঞ মহলের অনুমান। উত্তরাখণ্ড নির্বাচন নিয়ে রাওয়াত স্পষ্ট বলেন, “নির্বাচনী সমুদ্রে এবার আমাদের অনেক কুমিরের মোকাবিলা করতে হবে। অথচ এই অবস্থায় আমি যাঁদের নির্দেশে পদক্ষেপ নেব, তাঁরা আমার হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন। আমার মনে হচ্ছে যে, নেতৃত্ব যেন আমাকে বলছে, অনেক করে ফেলেছ হরিশ রাওয়াত। এবার তোমার বিশ্রাম নেওয়ার সময় এসেছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, কংগ্রেসকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরতে হলে বিজেপির কৌশলেই দলের আঞ্চলিক নেতাদের হাত শক্ত করতে হবে। এপ্রসঙ্গে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। কারণ শীর্ষ নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেস এখনও বিশ বাঁও জলে। হাইকমান্ডের ব্যাটন অনেকদিন আগে থেকেই ছেলে এবং মেয়ের হাতে তুলে দিতে চান সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু কংগ্রেসের বিদ্রোহী জি-২৩ গোষ্ঠী কার্যত রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কার নেতৃত্ব মানতে নারাজ। এদিন রাওয়াতের ক্ষোভের নিশানাও রাহুল-প্রিয়াঙ্কার দিকেই ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এদিন তাঁর টুইটে স্পষ্ট, উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার হল কি না, তা নিয়ে কংগ্রেস চিন্তিত নয়। বরং রাওয়াতের মতো প্রবীণকে যে বর্তমান নেতৃত্ব আর চাইছে না সেটাই সারকথা। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সফল এবং অভিজ্ঞ নেতা রাওয়াতের সাহায্য ছাড়া কংগ্রেস আদৌ ভোট বৈতরণী পেরোতে পারবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা তুঙ্গে। রাওয়াত পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নেতৃত্বের মানসিকতায় চরম অসন্তুষ্ট তিনি।